ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

নওগাঁয় দুইশ বছরের মাটির বাড়ি এখন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স

খোরশেদ আলম রাজু , নওগাঁ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিটি মানুষের সখের তালিকার শীর্ষে স্থান পায় গাড়ি, বাড়ি, নারী কেউ পায় কেউ না পাওয়ার হাহাকারে শেষ অবধি চেষ্টা চালিয়ে যায়। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও জমিদারের রেখে যাওয়া মাটির বাড়িটি জায়গা করে নিয়েছে দর্শক হৃদয়ে। রাজকীয় নকশা খচিত মাটির ডুপ্লেক্স বাড়িটি একনজর দেখার জন্য প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন প্রত্যন্ত পল্লী নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামে।

বর্তমান বাড়ির মালিক আসকার ইবনে সুলতান শান্ত বলেন, ১৮২৩ সাল নাগাদ জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের বাবা পাল বংশের কাছে থেকে একটি মাটির দোতলা বাড়ি খরিদ করেন । সেই সময়ে জমিদারির প্রায় সকল কার্যক্রম চালোনা হত এই বাড়ি থেকেই । সে সময়ে রাজা জমিদার খুব বেশী বিনোদন প্রিয় ছিল, সেই আমোদ প্রমোদে বিনোদন অঙ্গনের রঙ্গমঞ্চে স্বাদ নিতে সুদুর ভারত থেকে শিল্পী নিয়ে এসে এই বাড়ির উঠানেই বসত থিয়েটার চলতো যাত্রাপালা।

এখানে উচ্চ বংশীয় এবং উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সাথে পুজোর সময় সংস্কৃতি যুদ্ধো হতো। নওগাঁ‍‍`র মান্দা উপজেলার মৈনম বাজারে রায় বাড়ির জমিদার বাড়ি এখন আধুনিক মাটির ডুপ্লেক্স বাড়ি। ব্যাক্তি মালিকানায় থাকলেও দূর-দুরান্ত থেকে পর্যটক আসেন বাড়িটির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।

২০২১ সালে রায় বাড়ির বংশধর বুরন রায় এবং বাবন রায় জমি জমা বিক্রি করে নাটোরে চলে যান। বর্তমানে ক্রয় সুত্রে বাড়িটির মালিক আসকার ইবনে সুলতান শান্ত। বাড়িটি সংস্কারে আধুনিকায়নে শান্ত স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারিগরদের শৈল্পিক কারিগরিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এমন সৌন্দর্য্য যেন সকলে উপভোগ করতে পারে তার জন্য পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

বাড়িটির বর্তমান নাম রাইজিং হেরিটেজ প্যালেস, যার স্থাপনাকাল ১৮২৩ সালে। এখানে এখনও সেই সময়ের মাটির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। বাড়ির দেওয়াল গুলোতে মাটির স্তর দিয়ে নানান শিল্পকর্ম ফুটে তোলা হয়েছে আসকার ইবনে সুলতান শান্ত জানান, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার আদিবাসি পল্লী থেকে ৮০-৮৫ বছরের বৃদ্ধ দ্বিজেন বর্মন তার ২০ জনের একটি টিম নিয়ে ৪মাস শিল্প কর্মের কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় কারিগর দিয়ে প্রায় দুই বছরে সময়ের ব্যবধানে এমন রুপ দিতে পেরেছেন ।

তিনি আরও জানান, বাড়িটিতে অভ্যন্তরীন দুইটি মাটির সিড়ি রয়েছে যা প্রায় দুইশ বছরের পুরনো। আর সংস্কারের পর বাহির থেকে সকলের চলাচলে সুবিধার্থে সিড়ি করা হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ আসে মাটির এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখতে। স্থানীয় মুসলিম এবং সনাতন ধর্মের বিয়ে বা যে কোন অনুষ্ঠানে ফটোসুটের এমন আয়োজন ও উন্মুক্ত। তবে ছুটির দিন সহ বিশেষ দিনগুলোতে ভীড় বাড়ে। সবাই এসে ছবি উঠাই ভিডিও বানাই সেক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই সকলের জন্য উন্মোক্ত করা থাকে সব সময়।প্রতিবেশী এবং দূর থেকে আসা পর্যটকরা পুরাতন মাটির বাড়িকে এমন ডুপ্লেক্স বাড়িতে রুপ দেওয়ার শৈল্পিক নিদর্শন দেখতে ছুটে আসেন । 

চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার তানোর থেকে আসা এক দর্শনার্থী সজীব হোসেন বলেন,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় বাড়িটি সম্পর্কে জেনে আমি দেখতে এসেছি,বর্তমান আধুনিক যুগে এমন সৌন্দর্য্য মণ্ডিত মাটির বাড়িটি আমার খুব ভালো লেগেছে।

আরেক দর্শনার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাড়ি নওগাঁ সদরে হলেও এই বাড়িটির কথা অনেক শুনেছি তাই আজ দেখার জন্য আসলাম, এখন মাটির বাড়ি বিলুপ্তির পথে এই বাড়িটি মাটির হলেও একটা রাজকীয় তথা জমিদারি ভাব আছে যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। দুর থেকে আসা দর্শনার্থীরা হারানো এমন স্মৃতিকে ধরে রাখতে মোবাইলে ফোনে সেলফি তোলেন আবার অনেকে ভিডিও বানান ।

মৈনম গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গনমাধ্যমকর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এই বাড়িটি পূর্বে এমন সৌন্দর্য্য ছিলনা গত বছর নাগাদ বাড়িটির সংস্কার ও নকশার কাজ শুরু করে যা সম্পূর্ণ হওয়ার পর অনেক দর্শনার্থী দেখতে আসেন এতে করে ভালো লাগার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের মৈনম গ্রামের নামও ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশে। বাড়িটির সামনের অংশে পানির ফুয়ারা বসবার সু-ব্যবস্থা থাকাই সকলেই যেন সৌন্দোর্য্য উপভোগের সুযোগ সুবিধা পায় দর্শনার্থীদের কথা ভেবেই সামনের অংশে এমনটা করা। শুধু পর্যটক না এখানে কারো বিয়ে ব্রাইডলসুট করে থাকেন অনেকে। স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার সকল সৌন্দর্য্য উপভোগ করে বাড়িটি দেখতে আসা পর্যটকরা। পরিবেশ বিপর্যয়ের এমন সময়ে ইট পাথরের দালান না করে মাটির বাড়িকে ডুপ্লেক্স বাড়িতে রুপান্তর যা পরিবেশকে রক্ষার সামিল মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।