ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

পর্যটকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম

পর্যটকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নিচে বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রং-তুলির আঁচরে।

তাই যেন সৌন্দর্যমণ্ডিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাংলাদেশ ভারত সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ছতরপুরের এ লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এমন সময়টাতে সপ্তাহের সাত দিনেই ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে বিস্তীর্ণ লাল শাপলার বিল সীমান্তবর্তী এলাকা ছতরপুর। যে বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন দূর দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। তবে এখানে যে শুধু লাল শাপলা বা প্রকৃতির সবুজ রংয়ের সমারোহই ঘটেছে এমনটাও নয়, এখানে লাল শাপলার মাঝেই দেখা মিলছে সাদা শাপলা, সাদা বক, শঙচিল দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

জেলা শহর থেকে আসা কৃষ্ণা প্রমি নামের এক পর্যটকের মতে, এ শাপলার বিলে ঘুরে যে কেউ চিরচেনা বাংলার এক অপরূপের দেখা পাবে। তবে এ রূপ দেখতে হলে অবশ্যই ভোরের সূর্য ওঠার আগে সেখানে থাকতে হবে। কারণ ভোরে প্রকৃতি যেভাবে তার রূপ মেলে ধরে সেটি আর গোটা দিনেও উপভোগ করা যাবে না।

রাফি নামের এক তরুণ ফটোগ্রাফার বলেন, এটা একটি অন্যরকম জায়গা আমি প্রতি বছর এ লাল শাপলা বিলে প্রতিদিন ক্লাইন্ড নিয়ে আসি। ভোর বেলা সূর্য তার আসল রুপ ধারণ করার আগেই আসতে হয় এতে সকাল ভেলার সৌন্দর্য্যটা মন খোলে উপভোগ করা যায়। তবে পর্যটকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে কেউ যেন এ শাপলা না ছিঁড়ে এতে সৌন্দর্য্যটা অনেকদিন থাকবে।

ঘুরতে আসা আরেকজন পর্যটক বলেন, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দেবে। আর বিলের পানিতে নৌকা নিয়ে এগিয়ে চললে দেখা মিলবে লাল আর সাদা শাপলার সঙ্গে বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, দোয়েল, শালিক, মাছরাঙাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, শোনা যাবে তাদের কলকাকলি। এছাড়া দেখা মিলবে মৌমাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোঁকামাকরও। এ যেন এক স্বর্গপুরী, যার চারিদিক শিল্পীর নিপুন হাতে আকা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বৃদ্ধ জানান, বর্ষার ছয় মাস নিচু জমিতে কখনও হাটু আবার কখনও কোমর পানি থাকে। আর এতেই প্রকৃতির এই দান লাল শাপলা ফোঁটে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিলে শাপলা বেশি থাকে। দুর্গাপূজার আগ পর্যন্ত অনেকে এ শাপলা তরকারি হিসেবে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত প্রায় দুই মাস শাপলা বিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হয়। তবে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে মেলে ধরে লাল শাপলাগুলো আবার সূর্য মাথার ওপর উঠতেই ধীরে ধীরে নিজেকে আবার গুটিয়ে নেয়। আর তাইতো শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে সূর্য প্রখর হওয়ার আগে। প্রকৃতির নিয়মকানুন যারা জানেন বা বোঝার চেষ্টা করেন, তারাই শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে ভোরেই হাজির হয়ে যান বিজয়নগর ছতরপুর এ লাল শাপলা বিলে। ছোট ছোট নৌকায় করে বিলজুড়ে ঘুরে বেড়ানোই এখানে আনন্দ যোগায়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ শাহ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে সড়কপথে এ শাপলার বিলের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি শেখ হাসিনা সড়ক থেকে অথবা কাউতলী থেকে সিএনজি যোগে সহজেই আসা যায়। এ জন্য জেলা শহর ও আশেপাশের জেলা থেকে আসা বেশিরভাগ পর্যটক ভোরই নিজেদের মোটরসাইকেল, গাড়ি নয়তো, ভাড়া করা, প্রাইভেটকার, মাইক্রাবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

তবে আত্মীয়-স্বজন না থাকলে শাপলার বিলের আশেপাশে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও বিশ্রামাগারসহ পাবলিক টয়লেটের অভাবে পাশাপাশি বিলে যেতে সড়ক ব্যবস্থাও তেমন একটা উপযোগী নয় এতে কষ্টও দিচ্ছে পর্যটকদের।

ফেসবুকে ও ইউটিউবে লাল শাপলার অনেক ছবি ও ভিডিও দেখে ঘুরতে আসা তরুণী নুসরাত জাহান ইভা বলেন, বিলের পানিতে নৌকায় ভেসে বেড়াতে খুবই ভালো লেগেছে, বারবার এখানে ঘুরতে আসারও ইচ্ছে রয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে প্রকৃতি প্রেমীরা ঘুরতে আসতে চাইবেন না। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে এ শাপলা বিল সংরক্ষণ ও যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়ে নজর দেয়।

এখানে ঘুরতে আসা তরুণ সাইম বলেন, যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির অবস্থাও ভালো না। এসব কিছুর উন্নয়ন হলে কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এ অঞ্চল হবে পর্যটন বান্ধব।  

এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু বর্ডার এলাকা এই লাল শাপলা বিল পর্যবেক্ষণ করে যদি প্রশাসনিক কোনো পর্যবেক্ষণের উপযোগী হয় তাহলে সে ব্যবস্থা করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!