ঘরে মা অসুস্থ। দিনের বেলা রান্নাবান্নাসহ সব কাজে মাকে সাহায্য করতে হয় চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ুয়া মজুমদারের। রাতের বেলা একটু সময় পান লেখাপড়ার। ৩ মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় রাতের বেলা লেখাপড়াও করতে পারছে না কথা মজুমদারসহ অন্য শিক্ষার্থীরা। শুধু কথাদের ঘরেই নয়। আশেপাশের ১৭টি ঘরে বিদ্যুৎ নেই ৩ মাস ধরে। বিদুৎবিহীন থাকায় এই ১৭টি পরিবারের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ অফিস ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না ভূক্তভোগী এই পরিবারগুলো।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের কুঞ্জবন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ৩ মাস আগে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ লাইনের ট্রান্সফরমারটির যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে এই ১৭ টি পরিবার ৩ মাস ধরে অন্ধকারে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছে। আশ্রয়ণে থাকা পরিবারগুলোর ভ্যান-অটোরিক্সার চার্জসহ বিদ্যুৎ নির্ভর কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে অনেক শ্রমজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভ‚মিহীন ও গৃহহীন ১৭ টি পরিবার ২০২২ সাল থেকে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করে আসছে।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ৩ নম্বর ঘরে থাকেন লিটন মজুমদারের স্ত্রী ববিতা রানী। তিনি বলেন, ৩ মাস আগে হঠাৎ একদিন রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। ভাবছিলাম হয়তো লোডশেডিং চলছে। রাত পার হলেও যখন দেখি বিদ্যুৎ আসছে না তখন আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তাদের বিদ্যুৎ আছে। শুধু আশ্রায়ন কেন্দ্রেই বিদ্যুৎ নাই। এরপর আমরা পল্লী বিদ্যুতের অফিসে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয় জানালে তারা এসে দেখেন ট্রান্সফরমারের মেশিন চুরি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানানো হয় নতুন ট্র্যান্সফরমার বসাতে হবে। এর জন্য ৮০ হাজার টাকা লাগবে। আমাদের গ্রাহকদের ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাহলেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আমরা জরিমানার এই টাকাও জোগাড় করতে পারি নাই। তাই বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ১০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা হালিমা বেগম বলেন, গত ৩ মাস ধরে আমাদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই। আমার স্বামী একজন ব্যাটারীচালিত ভ্যানচালক। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে সে ভ্যানটিতে চার্জ দিতে পারছে না। যে কারনে সে বেকার হয়ে পড়েছে। ৩ ছেলেমেয়েসহ ৫ জনের সংসার। এখন কোনভাবেই আমাদের সংসার চলছে না। আমাদের ঘরবাড়ি ভিটামাটি না থাকার কারনে আমরা এখান থেকে অন্য কোন জায়গায় যেতেও পারছি না। দ্রæত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ না দিলে আমাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।
১২ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বাসিরোন বেগম বলেন, আমাদের আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরগুলোর বিদ্যুৎ লাইনের ট্রান্সফরমার আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাহিরে কোটালীপাড়া-রাজৈর সড়কের উপর খুঁটিতে বসানো ছিল। সেই মেশিন চুরি হলে আমরা কেন জরিমানা দিবো? এটা আমাদের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে।
১৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করি সকলেই দিন আনি দিন খাই। আমরা ৪০ হাজার টাকা কই পাবো? আমরা আগে গরমে কষ্ট করছি, এখন শীতে অন্ধকারে থাকি। আমারা আর কষ্ট পেতে চাই না। আমাদেরকে যেন অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়।
কোটালীপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ লাইনের ট্রান্সফরমারটির যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ায় তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নতুন ট্রান্সফরমার ক্রয় করতে ৮০ হাজার টাকা প্রয়োজন। পল্লী বিদ্যুতের নিয়মানুযায়ী কোন এলকার ট্রান্সফরমার চুরি হলে ওই এলাকার গ্রাহকদের অর্ধেক টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়। কুঞ্জবন আশ্রয়ণ কেন্দ্রর বাসিন্দারা নতুন ট্রান্সফরমার ক্রয়ের অর্ধেক টাকা দিতে না পারায় তাদের বিদুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা ৪০ হাজার টাকা জমা দিলেই ওই এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমি ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ওই ১৭ টি পরিবার বিদ্যুৎ পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :