ঢাকা সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লঞ্চে ঘুরতে গিয়ে নিজেই লঞ্চ বানালেন হাসান

নাজমুল রিপন, বরিশাল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৬:০১ এএম

লঞ্চে ঘুরতে গিয়ে নিজেই লঞ্চ বানালেন হাসান

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লঞ্চে ঘুরতে গিয়ে নিজেই একটি রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বরিশালের স্কুল শিক্ষার্থী মো. হাসান (১৫)। ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এই লঞ্চটি ইতোমধ্যে পানিতেও ভাসিয়েছে এ স্কুলছাত্র। যা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী প্রিন্স আওলাদ-১০ এর আদলে তৈরি হাসানের রিমোট কন্ট্রোলে চলা প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চটি নিয়ে এলাকায় এখন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

হাসান বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি রোড দক্ষিন আলেকান্দা কাজি পাড়ার এলাকার চা-বিক্রেতা সিদ্দিক এর সন্তান। সে বর্তমানে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। 

হাসান জানান, ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার ও পাখা দিয়ে লঞ্চটি তৈরি করতে তার সময় লেগেছে প্রায় ২ মাস। এতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার বেশি। লঞ্চটি তৈরি করে এরমধ্যে পুকুরের পানিতেও ভাসিয়েছে এই স্কুলছাত্র।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রিন্স আওলাদ-১০ এর আদলে নয়নের বানানো লঞ্চটি পানিতে চালাতে একটি রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছে একটি মোটর। মোটর দুইটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুইটি পাখা যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। তিন তলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রঙয়ের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। লঞ্চের নিচ তলায় ডেক ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন, এবং তিনতলার উপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা এবং সামনে হেড লাইটও রয়েছে। যা দেখতে হুবহু প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের মতো।

লঞ্চ বানানো স্কুলছাত্র হাসান বলেন, ‍‍`আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, সেজন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। ছোট বেলা থেকেই কোনো কিছু দেখলেই সেটা বানানোর চেষ্টা করতাম। বর্তমানে পরিবারের সহযোগিতা ও বড় ভাইয়ের আর্থিক সহায়তায় ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ করে লঞ্চটি তৈরি করেছি।

সম্প্রতি বাবা মায়ের সাথে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে ঢাকা যাই। পরে বাড়ি ফিরে সেই লঞ্চটি বানানো শুরু করি। প্রায় ২ মাসের চেষ্টায় প্রিন্স আওলাদ-১০ এর আদলে একটি লঞ্চটি বানাই। লঞ্চটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পানিতে চলতে পারে।‍‍`

হাসানের স্কুলের শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ও ছোট সময় থেকে পড়াশোনাও মেধাবী। হাসান এ কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষক হিসেবে গর্বিত। তার মেধার যদি মূল্যায়ন করা হয় এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সে নতুন নতুন আবিষ্কার দেখাতে পারবে। আমরা চাই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় হাসান আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাক। 

হাসানের বাবা সিদ্দিক জানান, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেয়া হয়। তার স্বপ্ন পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!