ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

শিক্ষককে অপহরণের পর চাঁদা দাবি, সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম

শিক্ষককে অপহরণের পর চাঁদা দাবি, সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে এক শিক্ষককে অপহরণ করার পর দাফায় দফায় ফোন করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী মেহেবুবা আনোয়ার লাইজু।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর একটি রেস্টেুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার অপহরণকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে মোবাইল অ্যাপ নগদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমার স্বামী মোহাম্মদ আরিফ (৪৯) পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল ৫টার দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়। ওই দিন রাতে এশার নামাজের পর নাছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে সালিস বৈঠকের কথা ছিল।

পরে পথচারীদের কাছ থেকে জানতে পারি আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পেকুয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে হতে অজ্ঞাত ৮-৯ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে অজানা স্থানে নিয়ে যায়।

ঘটনা জানাজানি হলে আমার স্বামী মো. আরিফের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল রিং হলেও রিসিভ হয় না। অনেক খুঁজা-খুঁজির পরে না পেয়ে আমি রাত ১২টার দিকে পেকুয়া থানায় জিডি করি এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি।

রাত সাড়ে ১২টার সময় অজ্ঞাত অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে ফোন করে আমার স্বামীকে অপহরণ করার কথা জানানো হয়। আবার রাত ২টার সময় আমার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে পরেরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ২০- ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপন নিয়ে চট্টগ্রামের ফ্রিপোর্ট এলাকায় যেতে বলেন।

আমি ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রামের ফ্রিপোর্ট এলাকায় গেলে আমার স্বামীর মোবাইল নম্বর বন্ধ দেখায়। একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে আমার স্বামীর মোবাইল থেকে অপহরণকারী কল দিয়ে ৩৫-৪০ লাখ টাকা দাবী করে ও পরেরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তিপনের টাকা নিয়ে আমাকে চট্টগ্রামের নতুন ব্রীজ পুলিশ বক্সের সামনে যেতে বলে।

আমরা কোনো ধরনের বাহিনীর (পুলিশ, র‍্যাব, আর্মি) সহযোগীতা নিলে আমার স্বামী মো. আরিফের মরদেহও খুঁজে পাবোনা বলে হুমকি দেয়। এরপর টানা দু’দিন মোবাইল বন্ধ রাখে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অপহরণকারীরা মোবাইলে কল করে মুক্তিপণের ৪০ লাখ টাকা দাবী করলে আমি ভয়ে স্বামীকে বাঁচাতে নগদ পেমেন্টের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর আমাদের সাথে অপহরণকারীরা যোগাযোগ বন্ধ রাখে। আমার স্বামীকে দ্রুত উদ্ধার করতে এবং ফিরে পেতে পেকুয়া থানা, কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ ও চট্টগ্রাম র‍্যাব-৭ এর কার্যালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করি।

শুক্রবার অপহরণের ৭ দিন পর হলেও এখনো আমার স্বামীর কোন খোঁজ পাইনি। আমার ছোট ছোট তিনটি ছেলে-মেয়ে প্রতিনিয়ত বাবা বাবা বলে কান্না করছে এবং পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে।

আমরা মনে করি, জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে আমাদের কোনঠাসা করতে এবং বিশাল অংকের মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ঠ দখলবাজ ও চাঁদাবাজ একদল সন্ত্রাসী এই অপহরণ কাণ্ডটি ঘটিয়েছে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান ও হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন-মানুষের প্রত্যাশা গুম, খুন ও অপহরণ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার স্বামী মো. আরিফকে ফিরে পেতে বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতির বিবেক খ্যাত প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্মানিত সংবাদিকগণের সর্বোচ্চ সহযোগীতা কামনা করছি

আরবি/ এইচএম

Link copied!