ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

যশোরে তালিকাভূক্ত ১শ ও শীর্ষ মাদক কারবারি ১৩

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম

যশোরে তালিকাভূক্ত ১শ ও শীর্ষ মাদক কারবারি ১৩

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যশোর শহর, শহরতলী ও ৮ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অপ্রতিরোধ্য ও সরব শ’শ’ মাদক কারবারির মধ্যে থেকে ডিলার, পাইকারি খুচরা ব্যবসায়ীর ধরন অনুযায়ী ১শ’ জনকে তালিকাভূক্ত ও ১৩ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে শনাক্ত করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর। শহর, শহরতলীর কয়েকটি স্পট, বেনাপোল, শার্শা, অভয়নগর ও চৌগাছায় বেশিরভাগ এসব মাদক কারবারির অবস্থান। বেপরোয়াভাবে মাদক কারবার চালিয়ে যাওয়া ওই তালিকাভূক্ত ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি শুরু করেছে অধিদপ্তরের কয়েকটি টিম।

পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ডিজির বিশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান শুরু করেছে এই দপ্তরটি। একজন শীর্ষ ও দুইজন তালিকাভূক্ত মাদক কারবারীকে আটক করা হয়েছে। আর এই অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালক আসলাম হোসেন।

গত জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্নস্থানে থানা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশি মুভমেন্ট কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে চলেছে আলোচিত সব মাদক কারবারি চক্র। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত যশোরেও জোরেসোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর সদস্যরা। যশোরের পুলিশ কার্যকরিভাবে মাঠে না থাকার সুযোগ নিয়ে যশোরে শতাধিক স্পটসহ জেলার সব উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাদক ব্যবসায়ী অপরাধী চক্র সরব। রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান কমে যাওয়ায় এখন মাঠ পর্যায়েও সরব শ’শ’ মাদক কারবারি।

চলমান এই পরিস্থিতিতে বিশেষ সার্ভে করে যশোর শহর, শহরতলী ও জেলার ৮ উপজেলা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে ১শ’ জনকে তালিকাভূক্ত মাদক কারবারি হিসেবে শনাক্ত করেছে। আর ডিলার পর্যায়ের বড় ১৩ জন কারবারিকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে শনাক্ত করেছে। তাদের হাতেনাতে আটক করার কলাকৌশলও হাতে নিয়েছে মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর। যশোরের শতাধিক স্পট ও ডেরার উপরও চলছে তাদের নজরদারি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান কমে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেপ্টেন্যান্ট জেনারেল অব. জাহঙ্গীর আলম চৌধুরী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসির বিশেষ নির্দেশনায় কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে উর্ধতনদের সাথে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যে কোনো উপায়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও আইনের আওতায় আনার উপর জোর দিলে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে যশোরে।

যশোর দপ্তর থেকে টিম করে করে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা ভূক্ত ১শ’ ও শীর্ষ ১৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের টার্গেট তাদের। জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার পতনকে পুঁজি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুযোগ সন্ধানী মাদক ব্যবসায়ী চক্র বেপরোয়া হয়ে পড়ে। অনেক থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে, বিভিন্ন জেলা পুলিশের কার্যালয়, ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনায় পুলিশের মধ্যে চরম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। এ ঘটনায় ৬ আগস্টের পর সপ্তাহখানেক সময় পুলিশ কর্মবিরতি পালন করে। তবে ওই দুই মাস বসে থাকেনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর। ওই দুই মাসে ৫০জন মাদক কারবারি আটকসহ ৩০টির মত মামলা দেয় মাদকদ্রব্য যশোর দপ্তর।

যশোর জেলার ৯ থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আটকে কাজ করে যাচ্ছে এই দপ্তরের অনেকগুলো টিম। যশোর শহরের ও শহরতলীর চাঁচড়া রায়পাড়া, ডালমিল এলাকা, বাবলাতলা, শেখহাটি, বিরামপুর, উপশহর, মন্ডলগাতি, খোলাডাঙ্গা, ধর্মতলা, পালবাড়ি, পুরাতন কসবা, লোনঅফিস পাড়া, ষষ্টিতলা, রেলস্টেশন, শংকরপুর, রেলগেট, মুজিবসড়ক, জেসটাওয়ার পাড়া, বারান্দীপাড়া, নীলগঞ্জ, ঝুমঝুমপুর, ঘোপ জেল রোড, বেজপাড়া তালতলা, আনছার ক্যাম্প এলাকা, আরএন রোড, খড়কি, কারবালা এলাকাসহ আরো অর্ধশত স্পটে নজরদারি করা হচ্ছে। তালিকাভূক্ত ওই ১শ’১৩ জন ছাড়াও যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন স্পটে আরো কয়েক’শ মাদক ব্যবসায়ী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং এরা শহরের শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমানভাবে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে বলেও তথ্য এসেছে অধিদপ্তরের কাছে।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল সহ নানা ভার্সনের মাদক মিলছে যশোরাঞ্চলে। আর ওইসব মাদক কারবারিদের মধ্যে থেকে তালিকা করা হয়েছে। মুটামুটি ১শ’ জন তালিকাভূক্ত ও ১৩ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শনাক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ডিজি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২ জন তালিকাভূক্ত ও ১ জন শীর্ষ মাদক কারবারিকে আটক করা হয়েছে মাদকদ্রব্যসহ। এরা হচ্ছে শার্শার ধান্যখোলার আব্দুস সালাম, জয়পুরের আব্দুর রাজ্জাক ও যশোরের কাজীপাড়ার আরমান হোসেন গাজী। অন্যদের আটকে অভিযান চলবে। মাদকসহ হাতেনাতে আটক করতে নজরদারি চলছে। চলমান পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী চক্রটি কৌশল পাল্টিয়ে ব্যবসা করলেও আটকের চেষ্টা করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর। এছাড়া তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে তথ্যগত সহযোগিতাও কামনা করেছেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!