মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মাথাভাঙ্গা নদীর উপর সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে ৩ বছর। এখনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হয় ভোগান্তিতে গাংনী ও দৌলতপুর উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,গাংনীর বেতবাড়িয়া ও দৌলতপুরের মধুগাড়ি নদীর উপর প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মান করছে কফিল অ্যান্ড কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।সেতুর দীর্ঘ ১০১০০ মিটার চেইনেজে ৭৫মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার নির্মিত সেতুটির কাজ। ৩ বছর হলো সেতু কাজ শেষ হলেও এখনো সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
বেতবাড়িয়া গ্রামের গাড়ি চালক আমিনুল দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি গাড়ি নিয়ে দুই উপজেলার গরু বিভিন্ন হাটে নিয়ে যায়। সংযোগ সড়ক না থাকায় অনেক কষ্টে গরু আনতে হয় দৌলতপুর উপজেলা থেকে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ কি.মি ঘুরে গরু আনতে হয় ঐতিহ্যবাহী বামন্দী হাটে। সেতুর পাশে রাস্তা হলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হবে।
মধুগাড়ি গ্রামের সবজি বিক্রেতা সুজন দাস দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, গ্রামে গ্রামের সবজি কেনার পর সেগুলো মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গায় বিক্রি করতে যায়। সংযোগ সড়কে না থাকায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে নাটনাপাড়া ও গরুডা ঘুরে সবজি বিক্রি করতে যেতে হয়। এর ফলে আমাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হয় গাড়িচালকদের। সংযোগ সড়ক হলে আমাদের ইনকামের সোর্স আরো বেড়ে যাবে।
কৃষক নয়ন কুমার দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিন ৫-৬ বার মাঠে আসি এই সেতু হয়ে। সেতুটি সংযোগ সড়ক না থাকাই আমরা ঠিকমত ফসল করে তুলতে পারছি না। এরফলে লেবাদের বাড়তি টাকা দিয়ে ফসল কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে। সড়ক হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
বোয়ালিয়া ইউনিয়ানের আ.লীগের সাবেক সভাপতি আলাবুল ইসলাম মাষ্টার দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, সাড়ে ৭ ব্যয় নির্মিত সেতুটি সংযোগ সড়ক হলে দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হবে। এই সেতুর সংযোগ সড়ক হলে ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক বড় অবদান রাখবে। ওর সাথে দুই উপজেলার মানুষের বন্ধুত্ব শোলক আচরণ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
০৮নং ওয়ার্ড কাজীপুর ইউনিয়ন ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য ৫ বছর আগে ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন মেহেরপুর-০২(গাংনী) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এমপি। সে সময় জমে দিতে চেয়েছিলেন অনেকেই,এখন জমি দিতে না চাওয়াই সংযোগ সড়ক হচ্ছে না। ব্রিজের সংযোগ সড়ক হলে প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে ২০-৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তি নিয়ে ৫-১০ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে মানুষকে।
জমির মালিক আমিরুল ইসলাম মোল্লা ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে দুপাশের অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা জমি দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি তবে এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে আমরা জমি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। সংযোগ সড়ক হলে দুপাশের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে বলে জানান জমির মালিকেরা।
কফিল অ্যান্ড কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার জানমহাম্মদ মিন্টু দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন,সেতু নির্মাণের সময় অনেকেই সংযোগ সড়কের জন্য রাস্তা দিতে চেয়েছিলেন।সেতু নির্মাণের পর অনেকেই সংযোগ সড়কের রাস্তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের আশ্বাসও পেয়েছি।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে জানান, কাজ শুরুতে জমির মালিকেরা অ্যাপ্রচ রাস্তার জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন।ভূমি মূল্য বেশি হওয়ায় তারা এখন দিতে রাজি হচ্ছে না। জমির অধিগ্রহণের জন্য সকল ফাইলপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক স্থাপন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :