মানিকগঞ্জ সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় দুশ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বুকে লালন করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে বালিয়াটী জমিদার বাড়িটির গোড়াপওন হয়। ১৩০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ এই বাড়ির জমিদাররা গৃহে প্রবেশ করে বলে জানা যায়। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পূর্ব পুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন স্বনামধন্য লবণ ব্যবসায়ী। এই বাড়ির উওর-পশ্চিম পাশে লবনের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল। এ জন্যই এই বাড়ির নাম রাখা হয়েছিল গোলাবাড়ি।
গোবিন্দ রায় সাহার পরবর্তি বংশধরা হলেন-দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম। এই পরিবারের স্মরণীয় অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী, বিন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানায় লাল, কিশোরি লাল, ঈম্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী প্রমুখ।
ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদেরই বংশধর বাবু কিশোরিলাল রায়। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ৫.৮৮ জমির উপর নির্মিত।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রতিটি প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে চারটি সিংহ মূর্তি সামনেই রয়েছে পাকা ঘাটলা বাঁধা বড় একটি পুকুর। বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ রয়েছে। প্রবেশ করতেই ভিতরে নানা রকমের ফুলরাজী সমৃদ্ধ প্রাচীন সোন্দয্য যেন দৃষ্টি নন্দিত।
বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উওর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামে ৫টি বড় ভবন রয়েছে। জমিদার বাড়ির প্রথম সাড়িতে চারটা ভবন রয়েছে। এগুলো নির্মাণশৈলী প্রায় একই রকম। চারটা জমিদারবাড়িই প্রায় ৫০ ফিট উঁচু একটা প্রাসাদ এতই কারুকার্যে ভরা যে, দর্শণার্থীরা প্রতি মুহূতেই বিস্মিত হয়। আট ইঞ্চি করে সিঁড়ির উত্থান আর বিশাল স্তম্ভ চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি।
১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর অধিগ্রহণ করে ব্যাপক সংস্কার করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছোঁয়ায় এখন তা নতুন সাঝে সজ্জিত হয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করছে। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এ জমিদার বাড়িতে ঢুকেই কারুকাজ দেখে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন। ভূয়সী প্রশংসা করেন সে আমলের ভবণ নির্মাণের কারিগরদের।
প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র মতে, ১৮৮৫ সালে জমিদার গোবিন্দ লাল সাহা এ বাড়ি তৈরি করেন। ১৯৮৭ সালে গেজেটের মাধ্যমে বড়িটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে ২০০৮ সালে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে। বর্তমানে এটি ওই বিভাগের আওতায় সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত। সামনের চারটি ভবনের মধ্যে পশ্চিম দিকে থেকে দ্বিতীয় ভবনের দোতলা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন প্রচীন নিদর্শন প্রদর্শন করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনাথীদের জন্য বাড়িটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
বালিয়াটির জমিদাররা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :