ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

পাহাড়ি ঢলের পানি থেকে রক্ষা পায়নি গুদামে মজুত চাল

ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শুক্রবার বিকালে আকর্ষিক স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট খাদ্য গুদামে মজুত কোটি টাকার অধিক মূল্যের দুই শতাধিক মেট্রিক টন চাউল ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গুদামের দরজার সামনে ইট বালু ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি তিন ফুটের অধিক উচ্চতা সম্পন্ন শক্তিশালী বাফেলো দেয়াল দিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে  ভেসে যায় পুরো খাদ্য গুদাম এলাকা। হালুয়াঘাট এলএসডি ইনচার্জ সঞ্জয় মোহন দত্ত গুদামের স্টাফ ও লেবারদের নিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা করে আংশিক রক্ষা করেন মজুত থাকা কোটি টাকার অধিক মূল্যের সরকারি চাল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম প্রাঙ্গণে পানির উচ্চতা ছিলো ৭ ফুটেরও বেশি। ঢলের পানির প্রবল স্রোতে একে একে ভেঙে যায় ৭টি গুদাম রক্ষায় নির্মিত শক্তিশালী ১৪টি বাফেলো দেয়াল। গুদাম গুলির মধ্যে একটি এক হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বাকী ৬টি ৫‍‍`শ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম রয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪, ৫ ও ৬ নম্বর গুদামের চাল। গুদামে মজুদ চালের খামালের কোনোটা দুই লেয়ার এবং কোনোটা দেড় লেয়ার পানিতে ডুবে গেছে। 

আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২, ৩ ও ৭ নম্বর গুদামে মজুত থাকা চাল। পুরোপুরি রক্ষা পায় ১ নম্বর গুদামে মজুত থাকা চাল। এক হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৭ নম্বর গুদামে ৭৮ মেট্রিক টন বোরো ধান ও প্রায় ২৫ হাজার খালি বস্তা মজুত ছিল। পাঁচ‍‍`শ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এক নম্বর গুদামে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন গম ও ২‍‍`শ ৫০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন নম্বর গুদামে ২৩ হাজার খালি বস্তা মজুত ছিলো। ৫টি গুদামে সর্বমোট সাড়ে ২৬ ‍‍`শ মেট্রিক টন বোরো চাল মজুত ছিলো বলে জানানো হয়। আকর্ষিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় খাদ্য অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগে কর্মরত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে। হালুয়াঘাট খাদ্য গুদামের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, "ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়। খামালের ওপর থেকে শুকনো চাল সরানোর কাজ শেষ হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।" মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর রাত ১০ টা পর্যন্ত গুদামের ভেজা চাল আলাদা করার কাজ পুরোদমে চলছিল। এরই মধ্যে প্রাণান্ত চেষ্টায় খাদ্য গুদাম থেকে পানি ও ময়লা-আবর্জনা অনেকটাই অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য গুদামের ইনচার্জ গুদামের স্টাফ এবং নিয়মিত শ্রমিক ছাড়াও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে রাতদিন নিরলস কর্মব্যস্ত রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্য গুদামে উদ্ধার কাজে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হাসান আলী মিয়া। কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ক্ষতিগ্রস্ত হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার ২‍‍`শ ৫০ মেট্রিক টন চাল ডেলিভারী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ৫‍‍`শ মেট্রিক টন চাল খাদ্যবান্ধব ডিলারদের কাছে ডেলিভারীর জন্য পুষ্টি মিলে হস্তান্তর করা হয়। আজ বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে আরো ৩‍‍`শ মেট্রিক টন চাল ডেলিভারী দেয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১হাজার ২‍‍`শ ৫০ মেট্রিক টন চাল ডেলিভারী দেয়া হবে বলে জানাগেছে। হালুয়াঘাট ছাড়াও ধোবাউড়া ও ময়মনসিংহ সদরের খাদ্যবান্ধব কিছু ডিলার চালগুলো বরাদ্দ পাবেন বলে জানানো হয়।

পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের, হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদুল আহমেদ ক্ষতিগ্রস্ত গুদাম পরিদর্শন করেন। সার্বক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত গুদামের কাজকর্ম মনিটরিং এর দায়িত্বে রয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের। জানাগেছে হালুয়াঘাট খাদ্য গুদামে থাকা ৭৮ মেট্রিক টন বোরো ধান চাল বানানোর জন্য সোমবার (৭ অক্টোবর) স্থানীয় মেসার্স শাকিল অটো রাইস মিলে হস্তান্তর করা হয়। মজুত থাকা প্রায় ৪০ টন গম ময়দা বানানোর জন্য নান্দাইলের মেসার্স জনতা ফ্লাওয়ার মিলে পাঠানো হয়েছে। রবিবার (৬ অক্টোবর) থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে পানিতে ভেজা চালের বস্তা আলাদা করার কাজ। ঢলের পানিতে ভেজা বস্তার সংখ্যা নির্ধারণ করার পর উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় কোনো রাইস মিলে নিয়ে চালগুলো শুকিয়ে খাবার উপযোগী করে দ্রুত ডেলিভারী দেয়া হবে বলে জানানো হয়।