ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ভয়াবহ ভাঙ্গনে দিশেহারা ফেনীতে নদী পাড়ের মানুষ

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম

ভয়াবহ ভাঙ্গনে দিশেহারা ফেনীতে নদী পাড়ের মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সম্প্রতি সময়ে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার পর এবার নদী ভাঙ্গনে আরেক বিপদের মুখোমুখি হয়ে দিনাতিপাত করছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। ছোট ফেনী নদী ও কালীদাস পাহালিয়া নদীতে জোয়ারের পর ভাটার সময় তলীয় যাচ্ছে ঘর বাড়িসহ রাস্তাঘাট। 

ইতোমধ্যে অন্তত শতাধিক ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ নিয়ে নদী পাড়ের হাজার হাজার পরিবার চরম উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীতে ভাঙ্গন ঠেকাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ফেনীতে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার সময় পানির প্রবল স্রোতে নদী পাড়ের মাটি দূর্বল হয়ে পড়ে। একই সময় ছোট ফেনী নদীর উপর নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাওয়ায় জোয়ার ভাটার সময় পানির ধাক্কায় নদীর পাড় প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর প্রতিদিনই ফেনীর কালীদাস পাহালিয়া ও ছোট ফেনী নদীর পাড় ভেঙ্গে নদীতে তলীয়ে যাচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও মানুষের বসতি।    

সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালীদাস পাহালিয়া নদী প্রবাহমান এলাকা ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর, দাশপাড়া, ছনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব সিলোনিয়া এবং নবাবপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫টি গ্রামে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এছাড়াও ছোট ফেনী নদীর চরদরবেশ ইউনিয়নের কাটাখিলাসহ আশপাশের বিস্তৃর্ণ এলাকায় নদী ভাঙ্গনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিদিনই মানুষের ঘরবাড়িসহ নানা সামগ্রী নদী গর্বে তলীয়ে যাচ্ছে।

অনেকেই ভাঙ্গনের ভয়ে প্রাণহানি এড়াতে বসতভিটা ছেড়ে শহরে গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেছে। ফেনী সদর উপজেলার নবাবপুর- লেমুয়া ইউনিয়নে যাতায়াতের পিচঢালা প্রধান সড়কটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ ফুটের সড়কের ১০ ফুটই নদীতে তলীয়ে গেছে। এতে সকল ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সড়কে এখন পায়ে হেটে চলাই বিপদজনক হয়ে উঠেছে। এছাড়াও ছোট ফেনী নদীর ভাঙ্গনেও কয়েকটি রাস্তা বিলীন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভাঙ্গন কবলিত ছনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব সিলোনীয়া গ্রামের বৃদ্ধা মরিয়ম বলেন, নদী ভাঙ্গনে তার বসৎবাড়িসহ সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। এখন তার কিছুই নেই। নি:স্ব হয়ে নদী পাড়ে বসবাস করতে হচ্ছে। বসবাস করার মত কোন জায়গা তার অবশিষ্ট্য নেই।

একই এলাকায় গৃহবধু আয়েশা আক্তার জানান, গত ১ মাসে এ এলাকায় অন্তত ৪০টি  বসৎঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেকেই এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারী-বেসরকারী কোন উদ্যোগ অথবা কোন সহযোগিতার কথা এখানকার কেউ জানেনা।  

লেমুয়া ইউনিয়নে মধ্যম চাঁনপুর গ্রামে রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ভয়াবহ বন্যায় জমির ফসল, পুকুরের মাছ ও ঘরের সকল আসবাবপত্র শেষ করে দিয়েছে। বন্যার পর একের পর এক ঘর বাড়ি, ফসলী জমি ও রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত নদী ভাঙ্গন রোধ করতে না পারলে মাথা গোঁজার ঠিকানাটিও হারাতে হবে।  

নবাবপুর ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ বাবুল মিয়া বলেন, নদীতে তার বাড়ি ভেঙ্গে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছি। ৪ মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। বাড়িতে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিও নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে। ছেলে না থাকায় আশপাশের মানুষের সহায়তা নিয়ে কোন রকুম দিনাতিপাত করছি। এভাবে কত দিন কাটাতে পারবো জানিনা। জীবন ও জীবিকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি।  

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জানান, ভয়াবহ বন্যায় নবাবপুর ইউনিয়নে ৫টি গ্রামে কালিদাস পাহালীয়া নদীর তীরে  ৭টি ভাঙন স্থান দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনের কর্তারা ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, বন্যার পর ফেনীর বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় নদী পাড়ের মানুষের বিপদ কাটছেনা। আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশাকরি শিগগির নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হবে।  

আরবি/জেডআর

Link copied!