স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণের আলামত গায়েব করতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা। তিনি বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) চেয়ারকে টাকা কামানোর মেশিন ভাবতেন।
ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার প্রভাষককে রক্ষা করার চেষ্টার অভিযোগে বেপরোয়া ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে প্রত্যাহার করার পর তদন্ত করছিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে আলোচিত ধর্ষণ মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক দফায় পরিবর্তন করার পরও আস্থা রাখতে পারছেন না মামলার বাদী।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বগুড়ার পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন নিজ কার্যালয়ে মামলার বাদীসহ চারজনের মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর পিবিআই সদর দপ্তর ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সবুজ আলীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের লিখিত অভিযোগ করেন মামলার বাদী।
অভিযোগ বলা হয়, আগের তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআই উপ-পরিদর্শক সবুজ আলী প্রকৃত সাক্ষ্য গোপন করে ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে মামলায় অর্ন্তভুক্ত না করে আদালতে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। পরে মামলার বাদীর নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বগুড়ার পিবিআই-কে ফের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগের তদন্ত কর্মকর্তা সেখানেই কর্মরত আছেন। এ কারণে সুবিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবার।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বগুড়ার ধুনট থানার ওসি ছিলেন কৃপা সিন্ধু বালা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ধুনট পৌর এলাকার অফিসার-পাড়ার কলেজ শিক্ষক দম্পতির স্কুলপড়ুয়া কন্যাকে ধর্ষণ এবং আপত্তিকর দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন প্রভাষক মুরাদুজ্জামান। তিনি একাধিকবার ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্ত মুরাদুজ্জামান ধুনটের জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এবং উপজেলার শৈলমারি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে।
জানা গেছে, ধর্ষণ ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে ২০২২ সালের ১২ মে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্তের দায়িত্ব নেন ধুনট থানার তৎকালিন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোনসহ অভিযুক্ত মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। কিন্তু থানার ওসির চেয়ারকে টাকা কামানোর মেশিন ভাবতেন কৃপা সিন্ধু বালা। ওসির কক্ষে বসেই মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করে অভিযুক্ত ধর্ষকের পক্ষের লোকজন। এরপর আসামির কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল ফোন থেকে ধর্ষণের ভিডিওসহ বেশকিছু আলামত গায়েব করেন তৎকালিন ওসি।
বিষয়টি বুঝেতে পেরে সেসময় পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মামলার বাদী। একারণে ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে ধুনট থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী কর্মস্থল পাবনা সদর থানায় ওসি হিসেবে বদলি হলেও সেখানেও টিকতে পারেননি কৃপা সিন্ধু বালা। তাকে পাবনা সদর থানা সরিয়ে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশে বদলি করা হয়।
মামলার বাদী জানান, সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার অপরাধগুলো প্রমাণ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল পিবিআই। সেখানে কৃপা সিন্ধু বালাকে ফৌজদারি ও বিভাগীয় আইনের যেসব ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এরপরও মামলার মূল চার্জশিটে কৃপা সিন্ধু বালাকে বাদ রাখতে উপর মহলের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
স্কুলছাত্রী ধর্ষণ, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ এবং আলামত গায়েব করার মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। কয়েক দফা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে সবশেষ বগুড়ার পিবিআই উপ-পরিদর্শক সবুজ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে মামলার আলামত গায়েব করার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে সাক্ষিরা মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য দেন।
মামলার বাদী বলেন, সাক্ষিদের দেওয়া প্রকৃত সাক্ষ্য গোপন করে তদন্ত কর্মকর্তা সবুজ আলী মনগড়াভাবে সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে মামলায় অর্ন্তভুক্ত না করে গত ২৪ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ১৫ আগস্ট নারাজির আবেদেন মঞ্জুর করে সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বগুড়ার পিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আসামি মুরাদুজ্জামান এখনো কারাগারে আটক আছে।
আপনার মতামত লিখুন :