বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে পাওয়া সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আমন্ত্রণে বেরোবি ক্যাম্পাসে আসেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। প্রধান ফটক উদ্বোধন, র্যালি শেষে দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
এ সময় অভিযোগ ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনবিরোধী শিক্ষককেও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। এ কথা জানতে পেরে বেরোবি থেকে পাওয়া সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তার একাংশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করেছিল। গত ১৬ জুলাই বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সেদিনও ছাত্র আন্দোলনে বিরোধী শিক্ষক কর্মকর্তা ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন, কেউ ঢিল ছুড়েন, কেউ ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন, আবার কেউ পুলিশকেও আক্রমণ করতে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।
বেরোবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় একাধিক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায়কে এবং শিক্ষার্থী আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত কলাম লেখক কলা অনুষদের ডিন ড. শফিক আশরাফকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা পোষণ করছি। তাদেরকে সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্মাননা স্মারকটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যে অভিযোগ তুলেছেন আমি তা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি মহোদয় যেন আপনাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। হয়তো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত বেরোবিতে এসে যেদিন আপনাদের দাবি পূর্ণ করতে পারব সেদিন প্রকৃত সম্মাননা গ্রহণ করব।
এ সময় বেরোবি উপাচার্য ড. শাওকাত আলী বলেন, আমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেরোবির উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করেছি। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আবু সাঈদ হত্যাসহ হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে খুব দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করার অভিযোগ অস্বীকার করে তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুকে পোস্ট দেন কলা অনুষদের ডিন ড. শফিক আশরাফ। তিনি ওই পোস্টে লেখেন, আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কলা অনুষদ শোক প্রস্তাব জানিয়েছিল। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর কলা অনুষদের ডিন জানাজায় ছুটে গিয়েছিল। আজকে কলা অনুষদের ডিনের দিকে আঙুল তুলে অসম্মান করা হলো।
তিনি আরও লেখেন, ব্যক্তি আর অনুষদের ডিন দুইটা আলাদা বিষয়। অনুষদের ডিনকে অসম্মান করা মানেই গোটা অনুষদকে অসম্মানিত করা। আজকে কলা অনুষদকে মঞ্চে তুলে অসম্মানিত করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই উপদেষ্টা নাহিদের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখান করা অত্যন্ত শিশুসুলভ কাজ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষদের এই অসম্মানে আমি ভীষণ মর্মাহত।
আপনার মতামত লিখুন :