চুয়াডাঙ্গায় শিশুদের নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। জেলার সদর হাসপাতালের অন্তবিভাগে ১৫ শয্যার শিশু
ওয়ার্ডে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে ভর্তি করা হয় ২৭ জন শিশুকে।
এছাড়াও এই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১৫০ জন শিশু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ৪০০ জনের বেশি শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১টি শিশু সেবা নিচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) মাহবুবুর রহমান জানান, আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২ থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুরা নিউমোনিয়া ও ৬ মাস থেকে দেড় বছর বয়সের শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস রোগ হচ্ছে। এ ছাড়া ঠান্ডাজনিত জ্বর ও টাইফয়েড সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। এসব রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু না খাওয়ানো যাবে না। আর প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর শরীর ঘামলে তা মুছিয়ে দেওয়া এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের শয্যাগুলোর একটিও ফাঁকা নেই। কোনো কোনো শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা চলছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বেশির ভাগ শিশুকে মেঝেতে শুইয়ে রেখে স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
শুধু শিশু ওয়ার্ডেই না, গাইনি ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী করিডর, শিশু ওয়ার্ডেরবারান্দা, গাইনি ওয়ার্ডের উত্তর-দক্ষিণ বারান্দাতেও শয্যা পেতে চলছে শিশুদের চিকিৎসা। কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাসনহাটি গ্রামের সলেমান মন্ডল বলেন, দুই দিন আগে আমার ছেলেকে জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে ভর্তি করি।
এখানকার চিকিৎসক জানায়, ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত চার মাস বয়সী এক শিশু হাতে ক্যানুলা লাগানো। শিশুটি বারবার কাঁদছে। মা-নানি সামলাতে পারছেন না।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রেহেনা পারভিন রুপালী বাংলাদেশ-কে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। রোগী সামাল দিতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এক শিশুর চিকিৎসা শেষ হতে না হতেই আরেক শিশুর অভিভাবক ডাক দেন।
ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, বিগত কয়েকদিন হঠাৎ বৃষ্টিতে কখনো ঠান্ডা আবার বৃষ্টি না থাকলে অনুভুত হচ্ছে তীব্র গরম। এই আবহাওয়ায় বাড়ছে ঠান্ডা, জ্বর-কাশিতে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। আক্রান্তদের প্রায় সবাই শিশু। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগী রাখার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা এমনকি সিঁড়ির মুখে রোগী রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সীমিত জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবাদানের চেষ্টা চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :