ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪

নীলফামারীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৩:০৯ পিএম

নীলফামারীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

হাসপাতালের ভাঙ্গাচোরা শৌচাগারের দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নোংরা ময়লাযুক্ত বিছানায় ছারপোকার উপদ্রব। সর্বত্রই উড়ছে মশা-মাছি, সঙ্গে আছে ভ্যাপসা দুর্গন্ধ। এমন চিত্র নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রোগী ও তাদের স্বজনেরা রয়েছেন দুর্ভোগে।

সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা আর অব্যবস্থাপনায় এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালতে অন্যান্য এলাকার বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৪০০/৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রতিটি সিঁড়ি ও মেঝেতে ধুলাবালির স্তর পড়ে রয়েছে। যেখানে-সেখানে নোংরা- অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। রোগীর শয্যাগুলোতে ছাড়পোকার ছড়াছড়ি। সেগুলো কামড় বসাচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের শরীরে। লোহার তৈরি নড়বড়ে বেড, ওষুধ রাখার ট্রেতেও পড়েছে মরিচা, তালা-চাবিও ভাঙাচুরা। বৈদ্যুতিক পাখাগুলো নষ্ট। কোনোটি চলে আবার কোনটি চলে না! পুরুষ ওয়ার্ডের চারটি শৌচাগার প্রায় ছয় মাস ধরে নষ্ট। মলমূত্র শৌচাগারের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। দুর্গন্ধে শৌচাগারের আশপাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। সেখান থেকে উড়ছে মশা-মাছি।

হাঁটাহাঁটি করছে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ। শৌচাগারের ময়লা আবর্জনা ওয়ার্ডের মেঝেতে ছুঁই ছুঁই অবস্থা। ফলে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডে। এছাড়া মহিলা ওয়ার্ডের গোসলখানা ও শৌচাগারগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী। শৌচাগারে ঢুকতে গেলে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। শৌচাগারের ভিতরটা স্যাঁতসেঁতে। পানি জমে মেঝে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। শৌচাগারে বৈদ্যুতিক বাতি নেই। এ ছাড়া ডাস্টবিনের ময়লা ঠিক মতো পরিষ্কার না করায় চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ শৌচাগারে আবার পানি থাকে না।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, দুর্গন্ধে হাসপাতালে থাকতে হয় নাক-মুখে হাত চেপে অথবা রুমাল চেপে। বারবার বলার পরও এসবের কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মীরা দিনে একবার এসে কোনোরকমে শুধু মেঝে ঝাড়ু দিয়ে যান। এরপর আর কোনো খবর থাকে না।

জাহিদুল ইসলাম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালে মানুষ আসে সুস্থ হতে। কিন্তু এখানে যে পরিবেশ, তাতে উল্টো অসুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে হবে। শৌচাগারের দরজা খোলামাত্র দুর্গন্ধ ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ে। তখন রোগী ও স্বজনদের নাকে- মুখে কাপড় গুঁজে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।

মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা জানান, ভর্তির সময় হাসপাতাল থেকে যে বিছানাচাদর দেওয়া হয়, একদিন পরেই তা নোংরা হয়ে যায়। বারবার বলার পরও তা পরিবর্তন করা হয় না। বিছানায় ছারপোকার অত্যাচারে রাতে রোগীরা ঘুমাতে পারে না। এর কামড়ে শরীর ফুলে যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনরকমে শৌচাগারে গেলেও গোসলের পরিবেশ নেই এখানে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত একবার শয্যার চাদর পরিবর্তন করার নিয়ম রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর সুস্থতার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এখানে তা যথাযথভাবে হয় না। আমরা প্রায়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলি, কিন্তু কাজ হয় না।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের পেছনে রয়েছে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের থাকার আবাসিক এলাকা। সেখানে আছে ঝোপঝাড় আর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা। পানি পচে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বাসিন্দারা বলছেন, হাসপাতাল ময়লার মধ্যে ডুবে আছে। বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে। যদিও পরিচ্ছন্নতার জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে: কিন্তু তা কোথায় খরচ হয় তা কেউ জানে না!

উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হাসপাতালটির পরিছন্নতা বাবদ বিভিন্ন ভাউচারে সাড়ে আট লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তানজিমুল মিল্লাত বলেন, আমাদের মাত্র দুজন পরিছন্নতাকর্মী রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর হাসপাতালের আবাসিক এলাকা পরিচ্ছন্নতার জন্য বরাদ্দ নেই। হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতা বাবদ বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক  মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি দেখা হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!