দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গাতে জানান দিতে শুরু করেছে শীতের আগমনী বার্তা। লোকালয় ও জনপদগুলোতে মাঝরাত থেকেই কুয়াশা ঝড়তে
দেখা যায়। দিনে গরম থাকলেও রাতে ও সকালে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিবারই একটু আগেভাগে অনুভব করে শীতের আমেজ। কিন্তু অন্যবারের তুলনায় এ বছর
জেলায় আরো আগে শীত নামবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সকাল থেকে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কুয়াশার কারণে প্রকৃতিতে ভিন্ন আমেজ দেখা যায়। দীর্ঘদিন টানা গরমের পর কুয়াশামাখা পরিবেশে পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ। ভোরে সড়কে কিছু যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়েও চলতে দেখা গেছে।
শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শীত আসতে শুরু করেছে ঘন কুয়াশার মাধ্যমে সেটিই আমাদের জানান দিচ্ছে। তবে দিনের বেলায় অনেক গরম অনুভূত হলেও রাতের বেলা কম্বল গায়ে নিয়েই ঘুমাতে হচ্ছে। এই আবহাওয়ায় শীতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বড় বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, কুয়াশা বেশি হলেও খুব বেশি শীত পড়েনি। তবে অর্ধেক রাত পর্যন্ত ঘরে ফ্যান চালাতে হয়েছে। আর বেলা ১১টার পর থেকে গরম লাগছে। শহরতলী দৌলাতড়িয়ারের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই হালকা শীত অনুভুতি করছি। ভোরে একটু বেশি কুয়াশা পড়েছে। কুয়াশা বেশি পড়লেও সকালে ১০ টা বা ১১টার পর ঠিকই গরম লাগে। শীত আসতেছে এটা বোঝা যাচ্ছে।
এদিকে, মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়টায় জ্বর ও সর্দি-কাঁশিতে কাবু হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। হাসপাতাল থেকে শুরু করে চিকিৎসকের চেম্বার-সর্বত্রই জ¦র ও সর্দি-কাঁশির চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন রোগীরা।
এছাড়াও ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ভয়। এক-দুদিনের বেশি জ্বর না থাকলেও গলায় খুসখুসে ভাব, শুকনো কাঁশি, শরীর ব্যাথা থেকে যাচ্ছে বেশ কিছু দিন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় কিছু সাধারণ রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। এতে জ্বর, সর্দি-কাঁশি, গলা ব্যাথা হাঁচির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে গেলেও অনেকের ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই মৌসুমে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণে এই উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে- এমনটা বলা যায় না। জ্বর হলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়ে নেন। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণে জ্বর কমলেও অন্য উপসর্গগুলো থেকে যায়। পরিস্থিতি জটিলও হয়ে পড়ে কখনো কখনো।
চুয়াডাঙ্গা শহরের কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় করছেন অসংখ্য রোগী। তাদের বেশিরভাগই জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা-কাঁশিতে আক্রান্ত।
এক চিকিৎসক বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ শীতের শুরুতে আমাদের শ্বাসনালীর প্রদাহগুলো বেড়ে যায়। এই সময় রাইনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। এছাড়া নীরবে এখনো কিন্তু মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছে।
সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভেজা, গরমের সময় প্রখর রোদে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি করে পানি পান, বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পড়ার অভ্যাসটা আবার চালু করা, গলায় প্রদাহ হলে কুসুম গরম পানি পান করা দরকার। জ্বর হলেই ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, এমনটা ভেবে নেয়া ঠিক নয়। আবার একে অবহেলাও করা ঠিক নয়। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসক ঠিক করবেন রোগীকে ডেঙ্গু, করোনা নাকি অন্য কোনো ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক সেবন করা যাবে না।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যসব ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারও এড়িয়ে চলতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :