ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

আক্কেলপুরে বস্তায় আদা চাষ

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম

আক্কেলপুরে বস্তায় আদা চাষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বনজ গাছের নিচে অব্যবহৃতভাবে পরে থাকা জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে এই প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে আদা চাষ করা হচ্ছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আদা চাষের এ বাণিজ্যিক আগ্রহ দেখিয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, আমদানি নির্ভর কৃষিপণ্যগুলো যাতে দেশেই উৎপাদন করা যায় সেই আগ্রহটা আমার সব সময় ছিল। বিশেষ করে প্রতিবছর আদা আমদানি করে দেশের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় । দামও অনেক বেশি। তাই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা যাতে খরচ কম হয় ও সাধারণ ক্রেতারা স্বপ্ল মূল্যে আদা ক্রয় করতে পরে সেই লক্ষ্যে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছি। এই চাষটি বস্তাতে করে রোপণ করলে ভালো একটা ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, বর্ষায় আদা চাষ করলে অনেক ক্ষতি হয়। যে কারণে কৃষকরা আদা চাষ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন না। কিন্তু বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। কারণ অতিবৃষ্টি ও খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হলে বস্তা দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। ফলে আদা গাছ সুরক্ষিত থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় বারি আদা ১, বারি আদা ২ ও পাহাড়ী জাতের প্রায় ৮ হাজার বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে।

এ বছর এক হাজার পাঁচশত বস্তায় প্রাথমিকভাবে আদা চাষ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা উপজেলার রায়কালি ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া গ্রামের তছলিম উদ্দীন বলেন, প্রতিটা বস্তায় ৪০-৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে। আমার পরিচর্যা ও অভিজ্ঞতার অভাবে বেশ কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। একেকটি বস্তায় একশ গ্রাম করে আদার বীজ রোপন করেছি । আশা করছি প্রতি বস্তায় ২ কেজি করে আদার ফলন হলেও খরচ বাদ দিয়ে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা।

উপজেলার পুন্ডুরিয়া, রুকিন্দীপুর, রামশালা, জাফরপুর, তিলকপুর ঘুরে দেখা যায় বাড়ির আশে পাশে পুকুর পাড়ে সহ বিভিন্ন বাগানে গাছের নিচে বস্তায় বস্তায় তরতাজা আদাগাছগুলো সতেজ অবস্থাতে রয়েছে। আর আদাগাছ পরিচর্যায় রয়েছেন নারী ও পুরুষ। প্রতিটা গাছের গোড়ায় দেখা যাচ্ছে আদা। কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে বর্ষায় কাদা পানি থাকা সত্বেও বস্তার মধ্যে বেড়ে উঠেছে আদাগাছ।

জাফরপুর গ্রামের নতুন কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল বলেন, আমি পরিক্ষা মূলকভাবে এবার নিজ দুই শতক ছায়াযুক্ত জমিতে  বাড়ি জাতের আদা রোপণ করেছি। আগামীতে জমির পাশাপাশি বস্তা প্রদ্ধতিতেও রোপন করব।

গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাশিড়া গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন ৫০ শতাংশ পতিত জমিতে দেশি জাতের ৩০০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এখন আদার কেজি ২৫০ টাকা। উত্তোলনের সময় ২০০ টাকা কেজি বাজার পেলে কয়েক লক্ষ টাকার উপরে লাভ হবে। ব্যয়ের তুলনায় লাভ বেশি হবে।

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না। গাছের নিচে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। এ বছর উপজেলার বেশ কিছু কৃষি  উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলক আদা চাষ করেছেন। প্রতিনিয়ত তাদের আদা বাগানে গিয়ে চাষিকে পরামর্শ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় আগামীতে এ উপজেলায় আদা চাষে অন্যান্য কৃষি  উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে আশা করি। এবার উপজেলায় বারি আদা-১, বারি আদা-২ ও পাহাড়ী জাতের আদা ৮ হাজার বস্তায় চাষ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতি বছর বিদেশ থেকে আদা আমদানি করতে হয়। আমদানি কমাতে আমরা কৃষকদের আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!