শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আবু রায়হান, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১১:১২ পিএম

প্রথমবারের মতো জয়পুরহাটে প্রজনন করছে কাস্তেচরা পাখি

আবু রায়হান, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১১:১২ পিএম

প্রথমবারের মতো জয়পুরহাটে প্রজনন করছে কাস্তেচরা পাখি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো জয়পুরহাটে বাসা বেঁধে প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করছে বিরল প্রজাতির খয়রা কাস্তেচরা নামে পাখি।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার গৌরিপাড়া এলাকায় বিরল এই পাখির কলোনীর সন্ধান পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় এখানে বাচ্চা ফুটিয়েছে এই পাখিগুলো। এতে দিনদিন বেড়েই চলেছে এই পাখির সংখ্যা। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুগ্ধ এখানকার স্থানীয়রা। প্রতিদিনই এই পাখি দেখতে আসছেন পাখি প্রেমীরা। দূর্লভ এই পাখি সংরক্ষণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে মনে করছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে দুর্লভ পাখি কাস্তেচর সহজে দেখা মেলে না। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্লেগাডিস ফ্যালসিনিলাস। ইংরেজি নাম গ্লোসি আইবিস। এদের স্থায়ী আবাস মুলত ভারতের পশ্চিম অঞ্চলে। ভারত অঞ্চল থেকে প্রতি মৌসুমে বাংলাদেশে আসে পাখিগুলো। আবারও মৌসুম শেষে চলে যায় তারা, তবে এদেশে বাসা বাধেনা। পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪৮ থেকে ৬৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের ডানা ৮০ থেকে ১০৫  সেন্টিমিটার লম্বা হয়। দেহের ওজন ৪৮৫ থেকে ৯৭০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এদের মাথায় পালক থাকে এবং সরু ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। এদের বিচরণ ক্ষেত্র খাল, বিল, হ্রদ, নদী, খাড়ি ও লবণাক্ত জলাভূমি। এরা খাল-বিল-পুকুর আর ফসলের মাঠ থেকে পোকা-মাকড়, শামুক, কাঁকড়া খেয়ে জীবন ধারন করে। সম্প্রতি এই পাখির কলোনীর দেখা মিলেছে উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকার একটি বাঁশঝাড়ে প্রায় ৭ বছর ধরে বসবাস করছে দূর্লভ প্রজাতির খয়রা কস্তেচরা পাখি। নিরাপদ আশ্রয় আর গ্রামবাসির ভালবাসায় পাখিগুলো এখানে প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করছে। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই পাখির সংখ্যা। পাখিটির সঠিক নাম না জানলেও গভীর মমত্ব আর ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন গ্রামবাসীরা।

গ্রামবাসীরা বলেন, এই পাখিগুলো দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এখানে বাঁশ ঝাড়ের উপর দেখছি। কিন্তু তার নাম জানিনা। এখন শুনছি যে, এর নাম কাস্তেচরা।

সোহেল রানা নামে এক গ্রামবাসি বলেন, পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এরা দিনের বেলায় খাবার সংগ্রহের জন্য যায়। আবার সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে। পাখিগুলোর কিচির মিচির আমাদের খুব ভাল লাগে। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশি মুগ্ধ হই।

একই এলাকার মিজানুর নামে একজন বলেন, পাখিগুলোকে আমরা ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখি। কেউ কোন ক্ষতি করেনা। পাখির প্রজনন যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় সে ব্যাপারে দেখভালের পাশাপাশি এদের রক্ষায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানাচ্ছি। বিরল প্রজাতির এই পাখিটির প্রথম সন্ধান পান জেলার আক্কেলপুরের পাখিপ্রেমী ও ফটোগ্রাফার সাদমান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির বিরল পাখি আবিস্কারের নেশায় আমি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াই। সেই নেশা থেকে ঘুরতে ঘুরতে জয়পুরহাটের গৌরীপাড়ায় এসে কাস্তেচরা পাখির সন্ধান পাই। এর আগেও এই পাখিটি দেখেছি। কিন্তু বাচ্চা তোলা এখানেই প্রথম দেখলাম। পরে ছবি তুলে আমার স্যারকে পাঠাই। তখন স্যার আমাকে বলে যে, বাংলাদেশে এই প্রথম বাসা বেঁধে এই পাখি বাচ্চা তুলেছে, যা অতি দুর্লভ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মুনিরুল এইচ খান বলেন, সাদমানের কাছ থেকে আমি খবর পেয়ে গৌরীপাড়া পাখি কলোনী দেখতে এসেছিলাম। এখানে প্রায় ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি রয়েছে। কয়েকটি বাসা করেছে, বাচ্চাও তুলেছে। কিছু বাচ্চা বড়ও হয়েছে কিছুটা। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই পাখি দেখা গেলেও বাসা করে প্রজননের রেকর্ড এটিই প্রথম।

তিনি আরও বলেন, খয়রা কাস্তেচরা পাখি মুলত পশ্চিম ভারতের দিকে বাসা করে। আমাদের দেশে শীতকালে বা অন্যান্য মৌসুমে আসে, কিন্তু বাসা করেনা। এটি খুব বিরল একটি পাখি। তবে আশার কথা এটি এখন আমাদের দেশে বাসা বেঁধে প্রজনন করছে। খয়রা কাস্তেচরা নামেই বোঝা যায়, এটি কিছুটা খয়েরি-লালচে রঙ্গের পাখি। দেখতে অনেকটা বকের মতো হলেও বক না। বকের ঠোট সোজা হয়, আর এটির কাস্তের মতো বাঁকা। এজন্যই একে কাস্তেচরা বলা হয়। এরা সবসময় একত্রে বসবাস করতে পছন্দ করে। বিলুপ্তপ্রায় পাখিটি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করছি।

এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের পাখি বিষারদ আল্লামা শিবলি সাদিক বলেন, পাখি কলোনী নিয়ে আমি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। জয়পুরহাটের গৌরীপাড়া পাখি কলোনীটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম। আমরা আগে অন্য কোথাও দেখতে পাইনি। আমরা বনবিভাগের পক্ষ থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, এই কলোনীটি সংরক্ষনের জন্য।

আরবি/জেডআর

Link copied!