চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় ইউনিয়ন সরল। বিগত আওয়ামী সরকারের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার চাচা একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ দেড়যুগের কাছাকাছি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও সরল ইউনিয়নে অবকাঠামোগত উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। তার মধ্যে পিছিয়ে পড়া জনপদ ওই ইউনিয়নের জনবহুল কাহারঘোনা গ্রাম অন্যতম। এ গ্রামের অভ্যন্তরিণ সড়কের বেহালদশা যেন দেখার কেউ নেই। প্রায় ১০ হাজার লোক এ গ্রামের অভ্যন্তরিণ তিনটি প্রধানসড়ক দিয়ে যাতায়ত করে। চরম দুর্ভোগে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে এলাকার লোকজনকে। বর্ষায় জলে-কাদায় নাকাল অবস্থায় দূর্বিসহ জীবনযাপন করে এই এলাকার লোকজন। দীর্ঘদিনের অবহেলিত কাহারঘোনার সড়ক সংস্কারের উদ্যোগগ্রহণ করে কাহারঘোনা সংস্কার পরিষদ (কাসপ)।
জানা যায়, কাহারঘোনা গ্রামের মূল তিনটি প্রধানসড়ক- খলিলুর রহমানের পুকুর পাড় থেকে আনন্দ পাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কি.মি দৈর্ঘ্যের `মছন ফকির সড়ক`, জালিয়াখালী বাজার হতে লালখান পাড়া হয়ে খালাইচ্ছ্যার দোকান পর্যন্ত প্রায় দেড় কি.মি দৈর্ঘ্যের `খালাইচ্ছ্যার বাজার সড়ক` ও জামালের দোকান হতে বড়ুয়ারটেক পর্যন্ত প্রায় এক কি.মি দৈর্ঘ্যের সড়ক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। কাহারঘোনা গ্রামের অভ্যন্তরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের প্রধান ওই সড়কগুলো দিয়ে মিনজিরিতলা, কাহারঘোনা, পৌরসভা ও মনকিচর গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। বর্ষায় জলে-কাদায় জলখেলিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। খানাখন্দে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে দুর্ভোগে পড়ে এলাকবাসী ও যানবাহন চালকরা। এলাকবাসী এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিকভিবে আবেদন করেও সাড়া পায়নি। তাই এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কগুলো সংস্কার করছে।
সংস্কার পরিষদের সভাপতি হারুন রশীদ জানান, `দীর্ঘদিন ধরে কোন জনপ্রতিনিধি সড়কের উন্নয়নে কাজ করেনি। তাই সড়কে স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখতে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। ঠিকাদারদের মতে ওই সড়কগুলোর সংস্কার করতে সরকারীভাবে প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা বাজেটের দরকার। কাহারঘোনা সংস্কার পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ওই সড়ক সংস্কারের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর সড়ক সংস্কারের কাজ উদ্বোধন করে আজঅবধি কাজ চলমান রয়েছে। পুরো কাজ সমাপ্ত করতে দরকার প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। অসমাপ্ত আরো ২০ শতাংশ কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।`
পরিষদের উপদেষ্টা মাওলানা আমিন উল্লাহ বলেন, `কাহারঘোনা সংস্কার পরিষদ বরাবরের মতোই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে আসছে। তাদের দ্বারা এলাকা আলোকিত হবে, সমাজ সংস্কার হবে। তারা বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আমি আশা করছি এ পরিষদের সার্বিক তত্বাবধানে কাহারঘোনা মডেল একটি গ্রামের জায়গা করে নিবে।`
সংস্কার পরিষদের সমন্বয়ক সমাজকর্মী ডা. মো. আলী বলেন, `প্রাথমিকভাবে ১১ অক্টোবর প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার বাজেট নিয়ে কাহারঘোনার মূল সড়কের কয়েকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে খানাখন্দ ভরাটের সিদ্ধান্ত নেয় কাসপ। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফুর্ত আর্থিক সহযোগিতায় কাহারঘোনার মূল তিনটি সড়কের সংস্কারে প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে আশি শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।`
কাহারঘোনা সংস্কার পরিষদের প্রধান প্রতিষ্টাতা সদস্য, প্রধান সমন্বয়ক মুহাম্মদ আবু ছিদ্দিক বলেন, `কাহারঘোনা সংস্কার পরিষদ একটি আত্মসামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন। এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে গরীব-দুস্থ মেয়েদের বিবাহের জন্য নগদ অর্থ প্রদান, অসুস্থ, পঙ্গু অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা, দুর্যোগকালীন ত্রাণসহায়তা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম সেনিটাইজার ও সাবান বিতরণ, কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা, গুণিজন সংবর্ধনা, কর্মসংস্থান ও সড়কে অন্ধকার দূর করণে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্ট্রিট লাইট তথা সৌর লাইট স্থাপন, সড়ক সংস্কারসহস নৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করে আসছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ সমাপ্তির পথে।`
আপনার মতামত লিখুন :