ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

নোয়াখালীতে কয়েকটি সড়ক খানাখন্দে ভরা, ধুলাবালিতে অসুস্থ পথচারী

মো. আবদুল্যাহ চৌধুরী, নোয়াখালী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ০৮:১০ পিএম

নোয়াখালীতে কয়েকটি সড়ক খানাখন্দে ভরা, ধুলাবালিতে অসুস্থ পথচারী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নোয়াখালীর জনগুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত অকেজো হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। রাস্তা অসম্পন্ন ও এবড়ো-থেবড়ো থাকার অজুহাতে এ রুটগুলোতে গাড়ি চালকরা অনৈতিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করায় হেনস্থার শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা, বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনাও। সাধারণ মানুষ চলাচলে ধুলাবালি ও খানাখন্দে একাকার হয়ে পড়ছে মানুষ। মুখে মাস্ক বেধেও পরিত্রাণ পাচ্ছেনা কেউই। ধুলাবালি ও খানাখন্দের কারণে এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাজ বন্ধ থাকা সড়কগুলো হচ্ছে, সোনাপুর থেকে কবিরহাট বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক, কবিরহাট থেকে বসুরহাট পর্যন্ত ১২কিলোমিটার সড়ক এবং বসুরহাট থেকে দাগনভুঁইয়া পর্যন্ত  ৮কিলোমিটার সড়ক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন সড়কগুলোর কাজ চলমান আছে কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই দৃশ্যমান নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সড়কগুলো ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোনাপুর-কবিরহাট সড়ক প্রসস্তকরণে বরাদ্দ হয়েছে ১১২কোটি টাকা। কবিরহাট থেকে বসুরহাট সড়কের জন্য ১০৮কোটি এবং  বসুরহাট থেকে ফেনীর দাগনভুঁইয়া সড়ক উন্নতির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মার্চ মাসে সড়কগুলোর কাজ শুরু করা হয়। তবে এসব সড়কের কাজ কচ্ছপ গতিতে হওয়ার ফলে জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

ফেনী-বসুরহাট সড়কের বাস চালক মাসুদ বলেন, ভাঙাচুরা অসমতল সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়শ যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের শরীরেরও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কষ্ট করি, যাত্রীরাও কস্ট করছে। প্রায় সময় গর্ত-খাদাখন্দে গাড়ি আটকে পড়ে। দূরপথে ঘুরে যেতে ভাড়া বেশি চাইলে যাত্রীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়।

ট্রাক চালক জসিম ও সিএনজি চালক রহিম। তারা বলেন, মালামাল বোঝাই ট্রাক নিয়ে অনেক সময় পথেই অচল হয়ে আটকে পড়ি। যন্ত্রাংশ ভেঙে দু’একদিন এভাবেই থাকতে হয়। মালামাল আনয়নকারী ব্যবসায়ীদের ট্রাক ভাড়া বেশি গুনতে হয়। দৃশ্যত মনে হয় এ সড়কগুলোর কোন অভিভাবক নেই।  

সূত্র জানায়, মেসার্স হাসান টেকনো বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সোনাপুর-কবিরহাট সড়ক প্রসস্তকরণের কাজটি পায়।

প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহাজালাল জানান, বন্যার কারণে আমাদের মালামাল রাখার ক্যাম্পে এখনও এক থেকে দেড় ফুট পানি জমে থাকায় মালামাল লোড-আনলোড করা যাচ্ছে না। ফলে ধীরগতিতে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, ৫আগস্টের পর কয়েকজন দাবী করেছেন, আওয়ামী লীগকে চাঁদা দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদেরকে চাঁদা না দিলে কাজ করা যাবে না। তবে তিনি তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, পুরোদমে কাজ আরম্ভ করলে বুঝা যাবে কারা চাঁদা চায় বা কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

কবিরহাট-বসুরহাট সড়কটির কাজ করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সালেহা আহম্মদ বাবুলের রানা বিল্ডার্স। ১০৮কোটি টাকা বরাদ্দ এ সড়কটি প্রসস্তকরণ কাজে।

এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল ফয়সাল বলেন, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির দরজা এলাকায় এবং ভুঁঞারহাট এলাকায় ভূমি একোয়ার (জমি অধিগ্রহন) জনীত সমস্যার কারণে, বন্যা এবং ৫ আগস্টের পরে কাজ বন্ধ ছিল। একই সমস্যার কারণে এখনও ধীরগতিতে কাজ চলছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে পুরো ধমে কাজ শুরু হবে।

বসুরহাট-দাগনভুইয়া সড়ক প্রসস্তকরণের কাজটির জন্য বরাদ্দ ৬০কোটি টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান  মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কাজ শুরু করলেও নানাবিধ কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, বন্যার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। কাজের গতি এখন শ্লথ থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে আরম্ভ হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, চলমান বন্যা, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে কাজের গতি কম হলেও চলমান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে কাজ আরম্ভ হবে। জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুততম সময়ে সড়কের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। ইতোমধ্যেই বাস মালিক সমিতির অনুরোধে সড়কের অনেক ভাঙ্গা গর্তে সাময়িক মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, বন্যা জনীত কারণে কাজ বন্ধের পর এখন চালু হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে পুরোধমে সড়কগুলোর কাজ চালু করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!