ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

কুষ্টিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড, আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম

কুষ্টিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড, আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দীন সেন্টু হত্যার ১ নম্বর প্রধান আসামি তরিকুল ইসলাম টুকু গ্রেপ্তার হলেও হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত বা অংশ নেয়া মূল আসামিরা এখনও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের নিজ অফিস কক্ষে সেন্টু চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাঁধা দেয়া, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করা, শূন্যপদ তৈরি করে চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখা এবং সন্ত্রাসীদের প্রভাব বিস্তারের জন্য পূর্ব শত্রুতার জেরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈমউদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবার ও এলাকাবাসীর। এদিকে, সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যা মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান তরিকুল ইসলাম টুকুকে গত ১৪ অক্টোবর রাতে র‌্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার ইলিয়াস খানের নেতৃত্বে র‌্যাবের অভিযানিক দল পাবনা সদর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। 

স্থানীয় ও নিহত চেয়ারম্যানের পারিবারিক সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিনের অর্থাৎ দেড় দশকের শান্ত ফিলিপনগরকে অশান্ত করতে চাঁদাবাজি ও লুটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয় তরিকুল ইসলাম টুকুর নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল। প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে। চেয়ারম্যান কিলিং মিশনে অংশ নেয়া টুকুর সন্ত্রাসী বাহিনী পলাতক আছে। তারা গ্রেপ্তার না হলে যেকোনো সময় ফিলপনগর ইউনিয়নে আবারও হত্যাকান্ড সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাতে পারে বলে স্থানীয়রা শংকা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যা মামলার প্রধান ১নম্বর আসামী তরিকুল ইসলাম টুকুকে দৌলতপুর থানা পুলিশ জেল হাজতে পাঠানোর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। যার কারণে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেও টুকুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তরিকুল ইসলাম টুকুর আরেকটি বাড়ী পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার স্কুলপাড়া এলাকায় (চারা বটতৈলা) রয়েছে।

সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে টুকু মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এছাড়াও ২০২১ সালের ৩১ মার্চ টুকু আনোয়ারা বেগম (৬৫) নামের এক বয়স্ক মহিলাকে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় মহিলার ছেলে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং-৩। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পরে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়। এদিকে নঈম উদ্দীন সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় টুকু বাহিনীর সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শুটার সোহাগ হোসেন ওরফে গিট্টু (২২), রওশন (২৩), রাসেল (২৭), লালন (২৬), নাঈম (২২), মো. গিট্টু (২৩), আল আমিন (২০), হিমেল (২৭) ও ইরাক (৩০) গ্রেপ্তার না হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মামলার বাদী ও নিহত চেয়ারম্যান পরিবারের সদস্যরা।

মামলার বাদী নিহত চেয়ারম্যান নঈমউদ্দিন সেন্টুর ছেলে আহসান হাবিব (কনক) বলেন, বাবার মৃত্যুর পর আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। আমার বাবা একজন জনপ্রতিনিধি ও আইনের রক্ষক ছিলেন। আমার বাবার সকল হত্যাকরীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। 

চেয়ারম্যান হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আওয়াল কবির বলেন, ইতিমধ্যে মামলার এক নম্বর আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীরা অনেক দূর দূরান্তে অবস্থান করছে, আমাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টিম পাবনা টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব এ হত্যা মামলার সকল আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।

চেয়ারম্যান হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীর দক্ষ অফিসারগন আসামি গ্রেফতারের কাজ চলমান রেখেছেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে, তবে হত্যাকারীরা যেই হোক, কোনো হত্যাকারীদের ছাড় দেওয়া হবেনা।

আরবি/জেডআর

Link copied!