ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন, হুমকির মুখে প্রাচীন শিল্প

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন, হুমকির মুখে প্রাচীন শিল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কামার পল্লী দা,বটি ছুরি তৈরীর টুং টাং শব্দে হতো মূখর, এখন সেখানে নেই চিরচেনা সে ব্যস্ততা। হাতেগুনা কিছু কাজ করেই টিকে থাকতে হচ্ছে কর্মকারদের। জেলায় প্রায় ৩০০ থেকে  প্রায় ৩৫০ কর্মকার পরিবার এখনো তাদের পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে ধরে আছে।বিদেশী দা, ছুরির হাকডাকে দেশীয় তৈরী পণ্যের চাহিদা কমায় ভাল নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামার শিল্পরা। এক সময় যে কোনো ধর্মীয় উৎসব ও ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কামারপল্লী মুখরিত থাকত কাজের ব্যস্ততায় । লোহার দাম বেড়ে বর্তমানে বাজার থেকে তা কিনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। তেমনি কয়লার দাম ও যেন আকাশ আর পাতাল। কামার কর্মকারদের ব্যবসার প্রধান উপকরণই হলো লোহা ও কয়লা। উপকরণের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ায় ও চাহিদা না থাকায় ভরা মৌসুমেও তাঁদের তৈরি লোহার জিনিসপত্রের আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না। ফলে চরম হাতাশায় দিন কাটছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামার শ্রমিকদের।

কিন্তু উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা না থাকায় এবার সেই ব্যস্ততা কমে গেছে। লোহা-কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকটা অলস সময় পার করছেন তাঁরা ভরা মৌসুমে কিছু ব্যস্ত সময় পার করলেও বছরের প্রায় ১১ মাস সংকটে থাকেন কামার শিল্প। উপকরণের দাম অনুযায়ী তৈরি করা লোহার জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারছেন না তাঁরা । দাম শুনেই ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।বিদেশি চুরি দা,প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র গুলো দেশে আসায় অবহেলিত দেশের কামার শিল্প।এতে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।এদিকে উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের এখন পুঁজিতে ঘাটতি পড়েছে। বেশি দামে লোহা আর কয়লা কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খাটাতে হচ্ছে ব্যবসায়। কিন্তু সেই টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না অনেকেই। ফলে বেসরকারি সংস্থা থেকে বেশি সুদে ঋণ নিতেও বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

জেলা শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার গৌরপদ কর্মকার প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনি কামার শিল্প পেশার সাথে জড়িত। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি যেমন দেখেছেন কর্মকার শিল্পের উথ্থান, তেমনি আবার হারাতে দেখেছেন এ শিল্পের জৌলুসও। তিনি বলেন, এক সময় দেশীয়ভাবে তৈরী দা, বটি, ছুরির বেশ কদর ছিলো। কিন্তু এখন আর্থিক দৈন্যতা ও চায়না পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে প্রাচীন এ শিল্পটি হুমকীর মুখে। কামার শিল্প যে এখন অবহেলিত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানের কামারপল্লী থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদসহ ভরা মৌসুমে লোহার তৈরি সামগ্রী ক্রয়ের জন্য আসত। সারা বছরের ক্ষতি এ সময়ে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিত তারা। তবে দিন দিন দেশীয়ভাবে তৈরী এসব সামগ্রী তৈরীর চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।

বিজয়নগর উপজেলা আউলিয়া বাজারের এক কর্মকাররা জানান, কাঁচা মালসহ লোহা, ইস্পাত, কয়লা ও রেতের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। এতে বেড়েছে উৎপদন খরচ। এছাড়া চায়না পণ্যের বিপরীতে বাজার ধরতে তাদের উৎপাদিত পন্য কম লাভে বিক্রী করতে হচ্ছে। ধার-দেনা করে ব্যবসা ধরে রাখলেও প্রাচীন এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তার দাবী জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে সড়ক বাজারের কামার শ্রমিক  চন্দ্র কর্মকার বলেন, তাঁরা এখনো পূর্বপুরুষদের এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। তবে ব্যবসায় মন্দাভাবের জন্য তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম পেশা বদল করছে। এ কারণে তাঁদের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছে অন্তত ৩০০ পরিবার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মাহমুদ হোসেন জানান, শীঘ্রই এ শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানায় সমাজসেবা কার্যালয়ের এই কর্মকর্তা।

আরবি/জেডআর

Link copied!