ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

বিলুপ্তির পথে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটা

সনজিত কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০২:২৬ পিএম

বিলুপ্তির পথে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মানুষ স্বভাবগতভাবে সুন্দরের পূজারি। আর এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল ও দাড়ি। যা নিয়ে মানুষের ভাবনারও শেষ নেই। ছেলেদের সৌন্দর্যের অনেকটাই বহন করে চুল-দাড়িতেই। তাই সৌন্দর্যবর্ধনে নরসুন্দরের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল ও দাড়ি কেটে সুন্দর করা যাদের পেশা তারাই নরসুন্দর। তারা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই খাটিয়ায় বসে চুল কাটা হারিয়ে যেতে বসেছে। পিঁড়িতে বা খাটিয়ায় বসে নরসুন্দরের হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি আবহমান কাল ধরে চলে এলেও সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।

কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন, গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক সেলুন, জেন্টস পার্লার, লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জে সাপ্তাহিক হাটে এখনো চোখে পড়ে চির চেনা পুরনো সেই দৃশ্য। স্বল্প খরচের কথা মাথায় রেখে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের কাছে চুল-দাড়ি কাটায়।

নরসুন্দর রতন কুমার বলেন, সরোজগঞ্জের এ হাটে সপ্তাহে সোমবার ও মঙ্গলবার বসে এই কাজ করি। ১৫-২০ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ৪-৫ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভা‌লো ভা‌বেই সংসার চলতো। কিন্তু, বর্তমানে চুল কাটতে ২৫-৩০ টাকা এবং দাড়ি কাট‌তে ১৫-২০ টাকা নেই। ত‌বে এত কমদামে চুল দা‌ড়ি কাটার মানুষ পাওয়া যায়। সারাদিনে ৩০০-৩৫০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো ক‌ঠিন হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। দীর্ঘ প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি।

চুল কাটাতে আসা হাসনহাটি গ্রামের বিশ্বনাথ, জাহিদুল ও মোবারক জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এখা‌নে চুল কাটাই। য‌দিও বর্তমানে অনেক আধুনিক সেলুন আছে। কিন্তু ওখানে চুল কাটা আমা‌দের সাধ ও সা‌ধ্যের বা‌হি‌রে, তাই সাশ্রয়ী এই সব না‌পি‌তের কা‌ছেই চুল কাট‌তে আসি।

চুয়াডাঙ্গা উপজেলার ফুলবাড়ী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে গ্রামের হাটে যেতাম। সেখানে পিড়িতে বসে নাপিতরা চুল কেটে দিত। এখনকার ছেলে-মেয়েদের চুল কাটায় আধুনিক সেলুনগুলোতে। আমরা এখনো এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও এমন একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিছকই গল্প মনে হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!