দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুদের নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। ঘরে ঘরে শিশুরা ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশিতে
আক্রান্ত হচ্ছে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ নিউমোনিয়া কিংবা ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি, কাশিসহ শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধরা ভর্তি হওয়ায় বেড়েছে রোগীর চাপ। শয্যা না পেয়ে মেঝেতেই বিছানা
বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদেরকে। গত এক মাস থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, সেকমো, নাসসহ অন্য কর্মচারিদেরকে।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডের বিছানাসহ মেঝে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীতে ঠাসা। বিছানা সংকটে গাদাগাদি করে সেখানে বিছানা করে রোগীদের রাখা হয়েছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। টিকিট দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরতদের। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ শতাধিক রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরছেন। এছাড়াও জরুরি বিভাগেও শীতজনিত নানান রোগসহ শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে অনেকে।
কয়েকদিন ধরে ৪ বছর বয়সী সুমাইয়ার গায়ে জ্বর, রয়েছে শ্বাসকষ্ট। গ্রাম্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে কোনো কাজ না হওয়ায় চিকিৎসা নিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সুমাইয়ার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো।
উপজেলার আলাদীপুর ভিমলপুর গ্রামের লাকী আক্তার তার তিন বছর বয়সি মেয়ে মিতিয়া মৌকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ক’দিন ধরে জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত থাকলেও এখন চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ মিতিয়া মৌ।
স্কুল শিক্ষিকা পাপিয়া চক্রবর্তী তার তিন বছর বয়সী ছেলে অর্জন কিছুদিন থেকে জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত। বর্তমানে তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে অথৈও সর্দি জ্বরে আক্রান্ত। এছাড়াও বাড়ির প্রায় সকলে ঠান্ডাজনিত রোগী আক্রান্ত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে অক্সিজেন নিতে দেখা যায় সত্তোর্ধ আবুল মিয়াকে। তার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবুল মিয়া বেশ কয়েকদিন
ধরে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত থেকে শ্বাস কষ্টে ভুগছেন তিনি। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। অক্সিজেন নিয়ে অনেক ভালো অনুভব করছেন বৃদ্ধ আবুল মিয়া।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাবরই রোগীর চাপ অনেক। ফুলবাড়ী উপজেলা পুরো এলাকাসহ নবাবগঞ্জ, পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দরের বিশাল অংশের মানুষ চিকিৎসা নিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমান। একে তো চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারি সংকট, তার ওপর বর্তমান সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগীদের উপচে পড়া চাপ।
সিনিয়র স্টাফ নার্স তিলোত্তমা ব্যানার্জি বলেন, গ দুই সপ্তাহ যাবত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী অন্ত:বিভাগে ভর্তির হার অনেক বেশি। এতে রোগীর চাপের কারণে শয্যা সংকটের
জন্য ওয়ার্ডের মেঝেতেই বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নূর-ই-আলম খুশরোজ আহমেদ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিশুসহ বৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত রোগ
নিয়ে হাসপাতালে ভিড় শুরু হয়েছেঅ। চলতি অক্টোবর মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীদের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :