ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

জীবন যুদ্ধে হার না মানা আব্দুর রহমান, এক পা দিয়ে রোজগার চলে পরিবারের

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম

জীবন যুদ্ধে হার না মানা আব্দুর রহমান, এক পা দিয়ে রোজগার চলে পরিবারের

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আব্দুর রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর থেকে যার একটি পা নেই। তবুও তিনি পরিবারের বোঝা না হয়ে বেচে নিয়েছেন উপার্জনের পথ। এক-পা দিয়ে রোজগারে চলে আব্দুর রহমানের চার সদস্যদের পরিবার। নিজের ইচ্ছে শক্তি আর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন একটি চায়ের দোকান। সেখানে চা খেতে প্রতিদিন ভীর করে দূর-দুরান্তর থেকে আসা লোকজন।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের উত্তর ঘনেশ্যাম এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান। তিনি ১৭ বছর আগে এক দূর্ঘটনায় নিজের ডান পা হারায়। এক-পা হারিয়েও থেমে যাননি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি হওয়ায় মাত্র ২০ হাজার টাকা পুুঁজি দিয়ে শুরু করেন চায়ের দোকান। একটি পা না থাকায় ক্রাচে ভর দিয়ে চলছে তার জীবন সংগ্রাম।

চুন থেকে পান খসলেই ডিভোর্স কিংবা অবিশ্বাসের নানান ঘটনা চারিদিকে নজরে আসে। সেখানে দীর্ঘ সময়েও অচল স্বামীর পাশে স্ত্রীর এমন সহযোগিতার সত্যিই প্রশংসনীয়। আধুনিক যুগের তথাকথিত প্রেম ভালবাসাকে হার মানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে স্বামীর সেবা, সন্তান লালন পালন সহ ছোট্ট দোকানের কার্যক্রমেও সার্বক্ষণিক লেগে থাকছেন আব্দুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। এ নিয়ে এলাকাজুড়েও রয়েছে এই জীবন যোদ্ধা দম্পতির ভুয়সী প্রশংসা।

আর্থিক সাহায্য ও কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করা হলে নিজেকে আরও বেশি কর্মক্ষম ও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন তারা। কৃত্রিম পা লাগিয়ে আরও বেশি গতিশীল করতে সরকারি সহয়োগিতা ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানায় এলাকাবাসী।

আব্দুর রহমানের দোকানের আয় দিয়ে চলে দুই সন্তানসহ চার সদস্যর পরিবার। স্থানীয় ও সরকারের সহায়তা পেলে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন বলে জানায় তিনি।

আব্দুর রহমান বলেন, আজ থেকে ১৭ বছর আগে দূর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছি, কিন্তু মনোবল হারা হইনি। ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেই কর্মের পথ বেচে নিয়েছি। এভাবে দুই সন্তান মানুষ করছি ও পরিবার চালাচ্ছি রোজগার করে। প্রতিদিন যা আয় করি তা দিয়ে সংসার কোনরকম চলছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আমার দোকানে চা খেতে আসে লোকজন। 

আব্দুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, আমার স্বামীকে মানুষ অবমূল্যায়ন করতো। সবাই তাকে চেয়ারম্যান মেম্বার কাছে গিয়ে সহায়তা চাওয়ার কথা বলতেন, কিন্তু আমার স্বামীকে কখনো ছোট হতে দেইনি। তাকে পরামর্শ দিয়ে চায়ের ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে দোকানের আয় দিয়ে দুইটি বাচ্চাসহ আমাদের সংসার ভালই চলছে।

কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিতাস আলম জানায়, সমাজের বোঝা না হয়ে আব্দুর রহমান ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে। যা সমাজে আর বাকি প্রতিবন্ধি ব্যক্তির জন্য দৃষ্টান্ত। সরকারের প্রতি আহবান থাকবে তাকে কিছু সহায়তা দিয়ে একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা যাতে করে দেয়।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুকান্ত সরকার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আব্দুর রহমানের একটা পা না থাকা শর্তেও তিনি ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি কারো কাছে হাত না পেতে স্ত্রী সন্তান্দের জন্য নিজে উপার্জন করছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। তার একটা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করার জন্য  উপজেলা সমাজসেবা অফিস বরাবর  একটি আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন করলে আমরা সমাজ সেবা দপ্তর থেকে কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিবো যাতে তার কিছুটা হলেও সুবিধা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!