শীতের আগাম বার্তায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় সনাতনী পদ্ধতিতে কুমড়ো বড়ি বানানোর হিড়িক। নতুন পালং শাক, খেসারি শাক, নতুন জাতের ফুলকপির পাশাপাশি আত্রাই নদীর পাতাসি মাছ সঙ্গে নতুন আলু, বেগুন ও কুমড়ো বড়ি দিয়ে রসালো রান্না ভোজন প্রিয়সীদের উপযুক্ত খাবার। রান্নার সবজির সাথে কুমড়ো বড়ি যোগ হয় আলাদা ধরনের স্বাদ। স্বাদ ফেরাতে খুব ভালো সাহায্য করে কুমড়ো বড়ি। রোগ-জীবাণুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা রয়েছে এই বড়ির।
স্বাস্থ্যবিদদের মতে, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এই বড়ি। কুমড়োয় ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা, ফাইবার রয়েছে তাই এই বড়ির উপকারিতা অনেক। মাষকালাই ডালের উপকারিতা বলবর্ধক, এতে প্রচুর লৌহ বা আয়রন আছে বলে এটি স্বাস্থ্যকর ডাল। দুপচাঁচিয়া পৌর ৭ নং-ওর্য়াডে লক্ষ্মীতলা এলাকায় কুমড়ো বড়ির গন্ধে মুখরিত চারিদিক। হিন্দু সম্প্রদায় বসবাসের এই এলাকায় সবাই সম্পৃক্ত কুমড়ো বড়ি তৈরির সাথে। কুমড়ো বড়ি তৈরি করে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার কোন রকমে সংসার চালায়। প্রত্যেক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়াশুনার পাশপাশি মা বাবার সঙ্গে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে সহায়তা করে। কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করে শতাধিক পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। সাড়া বছর কুমড়ো বড়ি তৈরি হলে তার চেয়ে শীতকালে চাহিদাটা আরো বেশী ও অধিক পরিমান কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রির দুটোই বৃদ্ধি পায়।
দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওর্য়াড লক্ষ্মীতলা মহল্লার কুমড়ো বড়ির কারিগর শ্রী শ্যাম চন্দ্র মহন্তর বাড়ীতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজার থেকে মাষকালাই কিনে এনে বাড়ীতে স্ত্রী-পুরুষ সহ পরিবারের অনেক সদস্য ওই মাষকালইকেযাতাঁই পিশে গুড়ো করে সেই গুরো ডাল বিকেল-বেলায় পানিতে ভিজিয়ে ঠিক ভোর রাত্রিতে ছেঁকে নিয়ে মাষকালাইয়ের ডাল, চাল-কুমড়ো, জিরা, কালো-এলাচ, কালোজিরা ও বিভিন্ন উপকরন মসল্লা দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিয়ে বাঁশের চরাটে পাতলা আবরন যুক্ত কাপড় মেলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনে কুমড়ো বড়ি দিয়ে কমপক্ষে তিনদিন রৌদ্রে শুকিয়ে তৈরি হয় শীতকালের রান্নার উপকরন সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি। সেই শুকনো কুমড়ো বড়ি বাজারে বিক্রির জন্য হিড়িক পরে যায়। কুমড়ো বড়ি মানে ডালের বড়ি। কুমড়ো বড়ি দেশে ব্যাপক চাহিদা ও বড়ির গুনগত মান থাকায় প্রতি কেজি তিন শত পঞ্চাশ টাকা থেকে ২ শত ৮০ টাকায় ক্রেতারা তাদের বাড়ী থেকে খুচরা ও পাইকারী দরে নিয়ে যাচ্ছে।
ওই গ্রামের অরেকজন কুমড়ো বড়ি তৈরি কারিগর দিলীপ চন্দ্র সাহা জানান, আমরা সাড়া বছর কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। তবে উত্তম সংরক্ষনের ব্যাবস্থা না থাকায় কাঁচা
মালের মতো কম দামেও বিক্রয় করতে হয়।
কুমড়ো বড়ি তৈরির কারিগরেরা আরো বলেন, বাংলা সনের কার্ত্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ কুমড়ো বড়ি চাহিদা বেশী থাকে। এ বছর উপকরনের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাট-বাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সংগে দাম কশাকশি করতে হয়। গত-বছরে নভেম্বর মাসে কালাইয়ের দাম প্রতি কেজি ১৩০টাকা ছিলো।এ-বছরে ডালের দাম ১৬৫/১৭০ টাকায় কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও কুমড়ো বড়ি তৈরির অন্যান্য উপকরনের দামও বৃদ্ধি।
কুমড়োবড়ি বানানোর কারীগর অসীম বসাক বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কুমড়ো বড়ি তৈরি করে ইটভাটার আগুনে একদিনেই শুকিয়ে বিক্রয় করে সাধারন মানুুষদের সঙ্গে প্রতারনা করছে। আমরা ভালো মানের কুমড়ো বড়ি তৈরি করে প্রতিদিন বিভিন্ন মহলায় বিক্রি করি এবংওই বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়ার সহ সংসারের দুমুঠো খাবার চলে।
আপনার মতামত লিখুন :