কারখানার শ্রমিককে মাদক বিক্রিতে বাধা ও কারখানা থেকে বের করে দেওয়ার জের ধরে কারখানার মালিক মো. সোহেলকে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারী সাগর শেখ। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সোহেলের স্ত্রী লাখি আক্তার ছয় জনের নামে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে অজ্ঞাত কারণে আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। এদিকে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
এ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- সাগর শেখ (৩০), মো. নাঈম শেখ (২৮), চান মিয়া চানু (৫৫), সাইদ শেখ (৩০), মেহেদী শেখ (২১), মুন্না শেখ (২৫)। মামলার প্রধান আসামি ও ৫-৬নং আসামি সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের নাজির হোসেন শেখের ছেলে। অন্যরা মামলার ২-৪নং আসামি একই গ্রামের চান মিয়া চানুর ছেলে।
এ মামলার আসামিরা তৎকালীন সমেয়ের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সার বিপ্লবের অনুসারি হওয়ায় গ্রেপ্তার থেকে বেচেঁ যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মামলার দুই প্রধান আসিম সাগর শেখ ও নাঈম শেখ পালিয়ে যায়। বাকি চারজন রয়েছে জামিনে। তবে মামলা তুলে নিতে আসামিরা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগির ভাই জুয়ের বলেন, মামলার প্রধান আসামি সাগর শেখ আমার চাচাতো ভাই। বড় ভাই সোহেলের কারখানায় কাজ করত। মামলার ২নং আসামি নাঈম শেখ সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারি। নাঈম ও সাগর মিলে আমাদের কারখানায় সামনে মাদক বিক্রি করত। পরে আমি ও বড় ভাই তাদেরকে বাধা দেই। পরবর্তীতে মাদক বিক্রির কারণে সাগরকে কারখানা থেকে বের করে দেই। এর জের ধরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নেতা এমপি হওয়ার পর তারা দুইজন মিলে আমার ভাইকে মারধর করে পেটে গুলি করে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ তাদের।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগি মো. সোহেল বলেন, ছয় মাস ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলাম। এখনো ভালোমত ক্ষত শুকায়নি। প্রতি মাসে ২-৩ বার ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে হয়। এত দিন আসামিরা এমপির লোক বলে বিচার পায়নি। প্রশাসনের কাছে গিয়ে কোনো প্রতিকার পায়নি। কিন্ত এখনো আমার উপর অত্যাচারের বিচার পাচ্ছি না! মামলার আসামি নারায়নগঞ্জ ও ঢাকার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তাদের ধরতে কোনো প্রকার চেষ্টা দেখছি না পুলিশের। তিনি আরও বলেন, গত মাসে এসপি স্যারের কাছে গিয়ে ছিলাম। তিনি ডিবির ওসি স্যারের সাথে কথা বলতে বলল। আবার ওসি স্যার এসআই আজাদ স্যারের কাছে মামলা হস্তান্তর করেছে, কিন্তু সেটার কোনো অগ্রগতি নেই। এ অসুুস্থ্য অবস্থায় প্রশাসনে কাছে ঘুরতে ঘুরতে আমি আরো অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছি।
তবে এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক আজাদ বলেন, আমি এ মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারি কর্মকর্তা। গত মাসে মামলাটা পাওয়ার পরে যে গুলি করেছিলো তাকে ধরার জন্য দুই বার অভিযান চালিয়েছি। তাকে গ্রেপ্তারে এসপি স্যারের নির্দেশ আছে। আমারা যে কোনো উপায়ে তাকে গ্রেপ্তার করব। তিনি আরো বলেন, আমি ভিডিওটা দেখেছি, একজন সাধারণ মানুষকে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে। এটা অন্যায় ও অমানবিক। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
এজাহার ও বাদির সূত্রে থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল ১১ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের নয়াহাজী বাড়ির সামনে বাদির স্বামী মো. সোহেল (৪১) কে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মামলার ৩নং আমি চান মিয়া চানুর হুকুমে সাগর শেখ (৩০), মো. নাঈম শেখ (২৮), সাইদ শেখ (৩০), মেহেদী শেখ (২১), মুন্না শেখ (২৫) মিলে মারধর করে। তার কয়েক ঘন্টা পর মামলার প্রধান আসমি সাগর কোমড় থেকে পিস্তল বের করে সোহেলের পেটে ঠেকিয়ে গুলি করলে সেই গুলি পেটের ডান দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সোহেল। এসময় সোহেলে কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে ডাকচিৎকারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাদি ও তার দেরর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়।
আপনার মতামত লিখুন :