গোষ্ঠিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গাইন ও পিয়াদা বংশের গোষ্ঠিগত বিরোধে গাইন বংশের প্রাণ গিয়েছে আপন দুই ভাইয়ের। এমন দাবি পুলিশের। দীঘদিন ধরে চলা এ বিরোধ নিষ্পতিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু নিজেদের দাম্ভিকতা ও বংশীয় আধিপত্য কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মাসুল গুনতে হয়েছে জীবন বিসর্জন দিয়ে। এখন সেখানে চলছে শুনসান নীরবতা ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারি।
এদিকে, হত্যাকান্ডে নিহত দুই ভাইয়ের ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বাদ আছর নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকেলে দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া বাজারে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দলীয় ক্ষমতার সাহসে হামিদুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ পিয়াদা বংশের লোকজন। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ৫ জন। নিহতরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিএনপি সমর্থিত হত্যাকারীরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এমন দাবি নিহতদের স্বজনদের।
এরআগে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত গাইন পরিবারদের এলাকা ছাড়া হতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে তারা এলাকায় ফিরে বসবাস করছিল। তবে দুই বংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলমান ছিল। এরই জের ধরে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটনা ঘটলো।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ছাতারপাড়া এলাকার বেগুনবাড়িয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক গাইন বংশ ও বিএনপি সমর্থক পিয়াদা বংশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বংশগত বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার বিকেলে পিয়াদা বংশের মনো, ওয়াসিম, রাসেল, ফারুক, রেনিস, কবিরুল, আলামিন, আজাবুল, রুবায়েত, ইন্তা মলিথা, সুমন পিয়াদা সহ ১৫-১৬ জন রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, হাত কুড়ালসহ দেশীয় ধারাল অস্ত্রে সজিত হয়ে ছাতারপাড়া বাজারে অবস্থানরত গাইন বংশের দুই ভাই হামিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা রাম দা, হাত কুড়াল ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাদের কুপিয়ে গুরুতর জখম ও শরীর থেকে হাত-পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আশংকাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলায় অন্তত ৫ জন আহত হলে গুরুতর অবস্থায় জামাল, আকবর, সাইফুল ও আসমতকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে বিরাজ করছে। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হামলায় নিহত হামিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের ভাতিজা সুজন ইসলাম জানান, বুধবার বিকেলে ছাতারপাড়া বাজারে ১৫-১৬ জন অস্ত্রে সজি¦ত আমার দুই চাচাদের ওপর হামলা চালিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাদের কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। যারা হামলা করেছে তাদের সাথে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বংশগত বিরোধ ছিল। আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থন করি আর যাদের হামলায় আমার দুই চাচা নিহত হয়েছেন তারা বিএনপি করে। পূর্ব বিরোধ নিয়ে আমার দুই চাচাকে হত্যা করেছে তারা। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় দৌলতপুর থানার ওসি শেখ আওয়াল কবীর জানান, পূর্ব বিরোধ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিক্ষরা দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ এলাকার কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, গোষ্ঠিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড না। দীর্ঘ বিরোধে এরআগে দুইপক্ষের মামলাও হয়েছে। তবে হত্যাকান্ডে জড়িত যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যাকান্ড ঘটানোর পর এলাকায় শুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে ঘাতকরা। সেখানে রয়েছে পুলিশ পাহারা। তবে নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :