শীত মৌসুম আসতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গার গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রাতে ঠান্ডা-হিমেল বাতাস আর সকালে শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি কারী গাছিদের ব্যস্ততা। শীত এগিয়ে আসছে। অযত্নে আর অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছের কদরও বেড়েছে। খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে প্রতিদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরাও। অনেকেই আবার মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
বুধবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেধে খেজুরের গাছ তৈরি করেছে। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ।
আর মাত্র কয় দিন পরেই খেজুর গাছে প্রতিদিন বিকালে গাছিরা সনাতন পদ্ধতিতে খেজুরের গাছ তৈরি শেষে মাটির খালি হাঁড়ি লাগিয়ে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রসের হাঁড়ি পেড়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে। গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস টিনের কাড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করবে গুড় ও পাটালি। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার স্বাদ ও ঘ্রান আলাদা। পুরো শীত মৌসুমে চলে এর পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার ধুম।
এছাড়া গ্রামে খেজুর গুড় দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠা, পুলি, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে এবং চার থেকে পাঁচ মাস ব্যাপি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি হবে বলে জানান গাছিরা। খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায় এবং অনেকে আবার বানিজ্যিক ভাবে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে।
জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাশপুর গ্রামের গাছি মো. মজনুর রহমান, আ. সালাম, হাতেম আলী জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের খেজুর গাছের সাথে গ্রামের অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে বানিজিক ভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিক কে ভাগ দিয়ে ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বাজারে বিক্রি করে থাকি।
তারা আরোও জানান, খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রস ভর্তি হাড়ি দেখলে সেই কষ্টের কথা ভুলে যাই।
চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যেত শীতের সকালে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, বাঁশের ভাঁড়ে কলস বেঁধে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করত। এছাড়াও খেজুরের রসের পিঠা পুলি লোভনীয়। শীতকালের বেশির ভাগ পিঠাই তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই দেখা যায় বাড়ি বাড়ি পিঠা পুলির উৎসবের ধুম পড়েছে। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন জানান, জীবননগর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার রাস্তার পাশে বিভিন্ন পরিত্যক্ত স্থানে গড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো শীতের সময় আসলেই কদর বাড়ে তবে খেজুর গাছ বেশির ভাগ ইটভাটায় পোড়ানোর কারণেই আজকে বিলুপ্তির পথে ইট ভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধের বিষয় বিষয় আমরা বন বিভাগকে বলছি। তিনারা একটু পদক্ষেপ নিলেই এটা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :