৫ আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দিনই রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের লীগ দুটি কার্যালয় প্রায় গুড়িয়ে দেয় বিক্ষুক্ষব্ধ ছাত্র-জনতা। বুলডোজার দিয়ে ভাংচুর চালানো হয় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়। দেওয়া হয় আগুন। আর সদ্য নির্মিত জেলা কার্যালয়েও ব্যাপক ভাংচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়। মহানগর কার্যালয়ের শুধু কিছু ইট খাড়া হয়ে আছে। জেলা কার্যালয়ের ছাদসহ ওয়াল থাকলেও দরজা-জানালার কোনো অস্তিত্ব নাই। কোনো আসবাবপত্রও নাই। ফলে দুটি কার্যালয়ে বসার মতো কোনো পরিবেশ নাই। মহানগর কার্যালয় নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। জেলা কার্যালয়ে বসতে হলেও ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। কিন্তু কারা করবে সেটি? এটিই এখন বড় প্রশ্ন সাধারণ কর্মীদের মাঝে। কারণ ৫ আগস্টের দিন থেকেই রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও গা ঢাকা দিয়ে আছেন। অনেকেই ভারত পাড়ি দিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
এই অবস্থায় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যায়ে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা তো দূরের কথা, ঝটিকা মিছিল করারও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেই দলটির কর্মী-সমর্থকরা। অথচ গত ৫ আগস্ট দুপুরেও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হওয়ার শঙ্কায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা স্বশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্র-জনতার ওপরে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন এবং চারদিন পরে মারা যান আরেকজন।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে বসার কোনো পরিবেশ নাই। আর বসার মতো মানসিক অবস্থা নাই কর্মী-সমর্থকদের। নেতারাই তো সবাই লাপাত্তা হয়ে আছে। কর্মীরা কেন ঝুঁকি নিয়ে দল বাঁচাতে যাবে?’
এদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করায় যে বিএনপির অফিসে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছিল, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সেই অফিসটিতে এখন নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম। ভাংচুর করা চেয়ার-টেবিলে চলছেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই নেতা-কর্মীরা গিয়ে খোস-গল্পে মেতে উঠছেন মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে। চলছে রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনাও।
জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মী বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আমরা এই অফিসে ঠিকমতো বসতেও পারিনি। সবসময় পুলিশ এসে ঘিরে রাখতো। তাদের কথা মতো মিটিং-মিছিল করতে হত। একটু ১৯-২০ হলেই চলত পুলিশি নির্যাতন বা ধর-পাকড়। এখন আর কোনো বাধা নাই। যে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কথা শুনে পুলিশ আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে। আজ সেই সন্ত্রাসীরাই মাঠে নাই। তাদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন কি তাদের কর্মীরা মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছে না। এটা প্রকৃতির বিচার।’
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে গত ১৬ বছরে রাজনীতি করে গেছি। দলীয় কার্যালয়েও ঠিকমতো বসতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। ভয়ে অনেকেই দলীয় কার্যালয় ছাড়া হয়েছিলেন। তবে আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মানসিক শক্তি ছিল প্রবল। ফলে যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে দলীয় নেতাদের সঙ্গে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এখন দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিদিন আসছেন। তাঁদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়।’
এদিকে, রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় এক যুগ ধরে মহানগর জামায়াতের কোনো কার্যালয় নাই। নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় আগে কার্যালয় ছিল। এর পর শিরোইল এলাকায় নেওয়া হয়। তবে একের পর এক হামলা-গ্রেপ্তারের কারণে সেখান থেকেও কার্যালয় গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় দলটি। এর পর প্রায় এক যুগ ধরে রাজশাহীতে জামায়াতের কোনো কার্যালয় নাই। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এতোদিন গোপনে সভা-সমাবেশ পরিচালনা করে আসছিল। তবে গত ৫ আগস্টের পরে রাজশাহীতে দুটি বড় সভা করেছে জামায়াত।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় তো ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের সময় সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা নতুন করে কার্যালয় খুঁঝছি। দ্রুত নতুন কার্যালয় নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। এখন নেতাকর্মীরা খুবই প্রাণচাঞ্চল্য। তারা কার্যালয়ে বসার জন্য মুখিয়ে আছেন।’
আপনার মতামত লিখুন :