ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

এখনো অধরা সাবেক দুই এমপিসহ আ.লীগের সিনিয়র এজহারভুক্ত আসামিরা

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:১৫ পিএম

এখনো অধরা সাবেক দুই এমপিসহ আ.লীগের সিনিয়র এজহারভুক্ত আসামিরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি এবং সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা দায়ের করেছেন এক ব্যবসায়ী।  

গত ২৯ অক্টোবর উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা এলাকার ব্যাবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করলেও ১ লা নভেম্বর রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলায় হুইপ পুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, হুইপের দুই ছোট ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত, মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব সহ ১২১ জনকে এজহারভুক্ত আসামি করে আরো ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টার  এ মামলায় আরো আসামি করা হয়েছে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, মোজাম্মেল হক রাজধন, নুরুল হুদা, এমরান, যুবলীগ নেতা সাইফুল হাসান টিটু, মহিম, বাবর, জাবেদ সরওয়ার, কায়ছার, সাদ্দাম, সাইফুজ্জামান মানিক, আব্বাস উদ্দিন ছোটন, ছাত্রলীগ নেতা কপিল উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, পটিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সরওয়ার কামাল রাজিব, গিয়াস উদ্দিন আজাদ, ইঞ্জি. রুপক কুমার সেন।

এছাড়াও সাবেক ১৫ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে আবুল কাশেম, এহসানুল হক, জাকারিয়া ডালিম, ইনজামুল হক জসিম, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ সেলিম, রনবীর ঘোষ টুটুন, সরোজ কান্তি সেন নান্টু, মাহবুবুল হক চৌধুরী, মো. বখতিয়ার, বি এম জসিম, শামসুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন সবুজ, ফৌজুল কবির কুমার, আমিনুল ইসলাম খান টিপু, সাবেক ইউপি সদস্য হাসেম মেম্বারসহ আ: লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজহারে বাদী ব্যাবসায়ী সাদ্দাম হোসেন উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত আসামিগন দলবদ্ধ সন্ত্রাসী, চাদাঁবাজ, অস্ত্রধারী, ভূমিদস্যু এবং অত্যাচারী প্রকৃতির লোক হয়। আসামিরা উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সন্ত্রাসী বাহিনী নামে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর আসামিরা ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে নিরীহ লোকদের নিকট চাদাঁ দাবি, মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে। গত ১১ অক্টোবর রাত ৮ টার দিকে ১-৩নং আসামিদের নির্দেশে ৪-১৮ নং আসামিরা যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। 

এতে বাদীসহ যুবদল নেতা আবুল হাসান, জাফর আহমদ, মো. রাসেল, মো. ফোরকান, সাইফুদ্দিন সহ অনেকেই আহত হয়। ১৯-১২১নং আসামিগণ "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু", "আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ" সহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে দিতে এলোপাতাড়িভাবে ককটেল বিস্ফোরণ করলে পুরো এলাকার আকাশে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এতে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়। এই সময় চট্টগ্রাম পটিয়া কক্সবাজার মহাসড়কের শান্তির হাট এলাকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভিকটিম ও স্বাক্ষীগণ বাধা দিলে আসামিরা বাদী ও ভিকটিমদের হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মারধর করে।

এসময় আসামিগণ শান্তিরহাটের বিভিন্ন দোকান পাটে ভয় দেখিয়ে দোকান বন্ধের চাপ সৃষ্টি করে এবং নানান ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দেয়।

পরবর্তীতে বাদীসহ জখমীরা জখম প্রাপ্ত অবস্হায় প্রথমে শান্তিরহাট জেনারেল হাসপাতাল ও পটিয়া জেনারেল হাসপাতালেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই পটিয়ার সাবেক দুই সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান।

তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পথেও কোন সংসদ সদস্য কিংবা চেয়ারম্যান ও দলটির কোন সিনিয়র সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে তার নিজ এলাকায় জনরোষের শিকারে পরিনত হওয়ার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল থেকে থানায় নিয়ে আসেন।

এসময় তাকে কয়েকটি মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হলেও সম্প্রতি সে জামিনে বের হয়ে এসে আবারো আত্নগোপনে চলে গেছে। গত শনিবার দুপুরে পটিয়া পৌরসভার ৩ নং ওয়াডের সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন আজাদকে আটক করে পটিয়া থানা পুলিশ।

আজাদ এখনো কারাগারে রয়েছে। সিনিয়র সারির মাস্টার মাইন্ড ও গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে বিএনপি অফিসে ভাংচুর ও লুটপাটের মামলা, ৪ ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি হামলা ও ৫ আগষ্ট গনঅভ্যুত্থানের দিনের ঘটনায় দায়ের করা এ পর্যন্ত ৫টি মামলার চিহ্নিত সিসিটিভি ফুটেজ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজের অস্ত্রধারী আসামিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার বাদী ও সাধারণ মানুষ আতংক, উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।

আওয়ামী লীগের দুই সাবেক এমপি ও দলটির উল্লেখযোগ্য সিনিয়র নেতাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এমন এক প্রশ্নের জবাবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, জেলা পুলিশ সুপার স্যার থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন গনঅভ্যুত্থান পূর্ব ও পরবর্তী মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে।

ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছি। খুব শীগ্রই পটিয়াতেও এসব মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার হবে। তাদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, ২৯ অক্টোবর রাতে পটিয়া থানায় একটি বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলা করা রজু করেছেন এক ব্যাবসায়ী। সেই মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে এবং সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ আরো ১২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।

এছাড়াও আরো অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৪০-৫০ জনকে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েক জন এজহার ভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছি। এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!