ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি গ্রাম। নাম `উমানাথপুর`। খুবই মজার ও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে একটি বাড়ি নিয়েই `উমানাথপুর` গ্রাম। এই গ্রাম নিয়ে মানুষের আগ্রহের যেন শেষ নেই।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে উমানাথপুর গ্রামের অবস্থান। ওই গ্রামেই একে এম সিরাজুল ইসলাম সরকারের বাড়ি। বাড়িটিতে বসবাস করেন একেএম সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মানোয়ারা বেগম।
এই গ্রামে একে এম সিরাজুল ইসলাম সরকার ও তার স্ত্রী মোছা. মানোয়ারা বেগমকে নিয়ে বর্তমান লোকসংখ্যা দুই এবং ভোটারও দুইজন। মাস তিনেক আগে একমাত্র ছেলে শরীফুল আলম সরকার মারা যায়। একমাত্র ছেলে মারা যাওয়ায় পুত্রবধূ ও নাতিও চলে গেছে। এক মেয়ে ফাহিমা নাসরিন সুমিকে খুলনা বিভাগে বিয়ে দেন।
উপজেলা শহর থেকে উত্তরদিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের `উমানাথপুর`গ্রামে কেবল মাত্র একটি পরিবার বাস করে। আর ওই পরিবারের একটি বাড়ি নিয়েই `উমানাথপুর` গ্রাম।
বাড়িতে রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, আছে একটি ছোট পুকুর ও একটি টয়লেট ছাড়াও কিছু গাছগাছালি। ফসলের জমির ছোট রাস্তা দিয়ে এ বাড়িতে প্রবেশ করতে হয় পরিবারের সদস্যদের।
সরেজমিন উমানাথপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে উমানাথপুর গ্রাম। কাগজপত্রে মৌজার নামও উমানাথপুর। এর আশপাশে গ্রামগুলো হলো উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে মমরেজপুর,পূর্বে উদয়রামপুর ও পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর গ্রাম অবস্থিত।
রাজিবপুর ইউনিয়নে মোট ৪৩টি গ্রাম রয়েছে। এরমধ্যে উমানাথপুর গ্রামটি সবচেয়ে ছোট। ওই গ্রামে সিরাজুল ইসলাম সরকারের নামীয় ২৩ শতক জমির ওপর গ্রামের একমাত্র আধাপাকা বাড়িটি অবস্থিত। সিরাজুল ইসলাম সরকার পেশায় একজন দলিল লেখক।
সিরাজুল ইসলাম সরকার (৭০) বলেন, ১৯৬৫ সন থেকে এই বাড়িতে বসবাস করছি। এর আগে পাশের রামগোবিন্দপুর গ্রামে আমাদের সাবেক বাড়ি ছিল।
তিনি বলেন এই গ্রামে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে উমানাথ চৌধুরী নামে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বাস করতেন।তাদের তালুকও ছিল। তার নামানুসারেই এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে উমানাথপুর গ্রাম।
সিরাজুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও মা সমর্ত বান ছিলেন এই বাড়ির মূল মালিক। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে পরিবারসহ এখন বসবাস করছি। পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৪ জন। একমাত্র ছেলে শরীফুল আলম সরকার কিছু দিন আগে মারা যায় এবং এক মেয়ে ফাহিমা নাসরিন সুমিকে বিয়ে দিয়ে এখন আমি ও আমার স্ত্রী মানোয়ারা বেগমসহ সদস্য সংখ্যা দুইজন।
নিজের কিছু জমিজমা চাষাবাদ করে ও দলিল লেখক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সিরাজুল। রাস্তাঘাট না থাকায় জমির আইল দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। বর্ষকালে একরকম ঘরবন্দি থাকতে হয়। তাছাড়া মসজিদ না থাকায় নামাজ আদায় করতে হচ্ছে ঘরে।
স্থানীয় রামগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হক পারভেজ বলেন, সিরাজুল ইসলাম সরকার আমার প্রতিবেশী। একটি গ্রাম নিয়ে একটি বাড়ি,সেই বাড়িতে দুইজন বাস করেন। এমন গ্রাম বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। এটি একটি বিরল ঘটনা। আমরা গর্বিত গ্রামটি নিয়ে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা ছাত্তার বলেন, এটি দারুণ একটি ব্যাপার। আমার মনে হয় এটি খুবই আনকমণ, এরকম কোথাও আছে কিনা।এটি একটাই মৌজা, একটা মৌজা নিয়েই একটি গ্রাম এবং এই গ্রামে দুইজন মানুষ বসবাস করে।ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী। খুব চমৎকার এবং আমার মনে হয় এবিষয়টি পুরো দেশজুড়ে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, প্রচুর প্রচার পেয়েছে বিবিসি বাংলায় বিষয়টি প্রচার পাওয়ার পরে সম্ভবত।
ইউএনও বলেন, এখন উনাদের একটি দাবী আছে। গ্রামের মধ্যে যে রাস্তাটি আছে সেটি ধানজমির মধ্য দিয়ে তারা যায়। এই রাস্তাটা যদি উন্নয়ন করা যায় সেটি তাদের যাতায়াতের সুবিধা। এই একটি দাবী তারা জানিয়েছেন আমাদের কাছে। আমরা ইনশাআল্লাহ আমাদের আগামী যে প্রকল্পগুলো সেখানে তার এই চাওয়াটা পূরণ করার চেষ্টা করবো।
একটি মসজিদ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আশেপাশের সব গ্রামগুলোকে বিবেচনা করে নিশ্চয় এটাকে মাথায় রাখতে পারি। বেষ্ট সুইটেবল কোন জায়গায় একটি মসজিদ হলে উনারা সবাই উপকার পাবে এ মসজিদটি থেকে।
আপনার মতামত লিখুন :