ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নাগরপুরের ৪শ বছর পুরোনো মসজিদ

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নাগরপুরের ৪শ বছর পুরোনো মসজিদ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রহস্য ঘেরা নাগরপুরের ৪শ বছরের পুরোনো মসজিদটি আজও আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। রহস্য ঘেরা এ মসজিদটি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবারিয়া গ্রামে অবস্থিত। এটি স্থানীয় ভাবে তেবাড়িয়া জামে মসজিদ নামেই পরিচিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৬০১সালে মৃধা বংশোদ্ভূত আব্দুল মালেক খা মৃধা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। লোকমুখে শুনা যায় প্রায় সারে ৪শ বছর আগে গায়েবি ভাবেই দুটি গম্বুজ উঠেছিল। তারপর এখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যদিও এর কোন উপযুক্ত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি।

সম্পূর্ণ মোঘলি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটির গা ঘেষেই প্রভাহিত হত যমুনা নদী।

জনশ্রুত রয়েছে, মসজিদ থেকে যমুনা নদীর বেশ দুরুত্ব ছিল। নদীর পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মসজিদের পাশেই চলে আসে নদী।মসজিদের পাশে এসেই বন্ধ হয় ভাঙ্গন।স্থানীয়রা জানান, এই মসজিদের জায়গায় একজন কামিল পাগল বাস করতেন। সেই পাগল খরস্রোতা নদীর পানির উপর দিয়ে খড়ম পায়ে অবলীলায় হাঁটতেন। কথিত আছে, যতদূর ওই পাগল পানির উপর দিয়ে হেঁটেছিল ওই অংশটুকু বালির চর হয়ে যায়। এরপর হতে নদীর দিক পরিবর্তন হয়ে যায়।তারপর থেকে মসজিদের দিকে আর নদী আসেনি। সেই থেকে মসজিদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। মসজিদটির বয়স ৪শ বছরের বেশি।মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ ও চার পাশে গম্বুজসহ মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে। মুল মসজিদ তার দুপাশে রয়েছে ছনের ঘড় সাদৃশ্য দুটি কক্ষ। সুন্দর নকশায় নির্মিত এই মসজিদটিতে রয়েছে রহস্যে ঘেরা। রহস্য রয়েছে মসজিদ নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ একাধিক এলাকাবাসী মসজিদটি নির্মাণ সম্পর্কে বলেছেন, এটি আপনা আপনি তৈরি হয়েছে। কেহ বলছেন মসজিদের নকশাটি ভেসে উঠেছিল ঐ জমিনে, পরে সেই নকশা হিসেবে নির্মান করেন মসজিদটি।

নাগরপুর উপজেলায় ব্যতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন মসজিদটির নির্মাণকাল ও আসল বয়স জানা যায়নি বা কেহই জানেন না, তবে ১৬০১ খৃষ্টাব্দ প্রতিষ্ঠিত(সম্ভাব্য) দেওয়া হয়েছে। মসজিদটি মোঘলি স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত হওয়ায় ধারণা করা হয় মসজিদটি মোগল সম্রাটের আমলে নির্মাণ করা হয়েছে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান মন্টু কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করলেও দানকৃত জমির পরিমাণ ২৫৩ শতাংশ রয়েছে বলে জানান। জমি দাতার নাম মালেক খান মৃধা। দানকৃত জমি কিছুটা দখলে কম আছে বলেও দাবি করেন তিনি। মসজিদটি গায়েবী নয় তৈরি করা হয়েছিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সলিমাবাদ তেবাড়িয়া পাকা সড়কের রাস্তার পাশেই দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি অবস্থিত। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসছে মসজিদটি দেখতে। উদ্দেশ্য গায়বি মসজিদটি স্বচক্ষে দেখে দু‍‍`রাকাত নামাজ পড়ার জন্য। কেউ আসছে বিভিন্ন মানসা (মনোবাঞ্চা) পুরণে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করতে। মসজিদটি খুবই জাগ্রত বলে ধারণা করেন এলাকাবাসী। এলাকাতে মসজিদটির কদর রয়েছে।

জানা যায়, তেবাড়িয়া গ্রামের ছয়টি মসজিদ থাকলেও শুক্রবার জুম্মার নামাযের জামাত অনুষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র এই মোগল আমলে স্থাপত্য/গায়েবী মসজিদে। মুসুল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে একসাথে।

মো. শরিফ খান তালুকদার জানান, মসজিদটি প্রথমে শুধু সামনের মূল অংশটি ছিল। মসজিদ তৈরীর (সম্ভাব্য) সাল ১৬০১খ্রিষ্টাব্দ মোগল আমলে। এরপর ২০০১ ও ২০১৮ সালে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণ ও দিন দিন লোকসমাগম বাড়তে থাকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপে মসজিদটি আরো বাড়ানো হয়। বর্তমানে একসাথে ২২০০ জন মুসল্লী এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। মূল মসজিদের ডান পাশে সু- উঁচ্চ একটি ১০০ ফুট মিনারের কাজ চলমান রয়েছে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!