ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪

৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনের বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা পেলেন শিক্ষক ফরহাদ আজাদ

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০১:২৩ এএম

৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনের বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা পেলেন শিক্ষক ফরহাদ আজাদ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দীর্ঘ ৩২ বছর সময় চট্টগ্রামের পটিয়ার মোজাফরাবাদ নুরুজ্জামান যাত্রামোহন উচ্চ  বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন কাজী মোহাম্মদ ফরহাদ আজাদ। ৩১ অক্টোবর ছিল তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। এরপর দিন এ শিক্ষককে অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষক কর্মচারী ও বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

১৯৯২ সালের দিকে নিজের শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন শিক্ষক ফরহাদ আজাদ। এরপর থেকে একে একে কেটে গেছে প্রায় ৩২ বছর। বাংলা বিষয়ে পাঠদান করাতেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিচয় ছিল ‍‍`বাংলা স্যার‍‍` হিসেবেই।

শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসের পরদিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মী শিক্ষকদের পাশাপাশি উপস্থিত হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষককে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় দেন তারা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয়ের হল রুমে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদায়ী শিক্ষককের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। তার হাতে তুলে দেয়া হয় বিভিন্ন সম্মানসূচক ক্রেস্ট। শিক্ষার্থীরা বিদায়ী বক্তব্যের মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষাগুরুকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বোয়ালখালীর বাড়িতে পৌঁছে দেন তার শিষ্যরা ও শিক্ষার্থীরা।

বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবন কুমার বিশ্বাস, বলেন, যেকোনো বিদায় বেদনার, কষ্টের। কাজী মোহাম্মদ ফরহাদ আজাদের মতো শিক্ষক এদেশের সম্পদ, তারাই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। তার অনুপস্থিতিতে এ বিদ্যালয় তার শুন্যতা অনুভব করবে। সবকিছুরই শেষ আছে, না চাইলেও একদিন ঠিকই বিদায় বলতে হয়। আমি তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকলকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

প্লাবন কুমার বিশ্বাস আরো বলেন, তার কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের কল্যাণে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। আমি তার অবসরকালীন জীবন সুখে স্বাচ্ছন্দে, সুস্থ ভাবে কাটাতে পারে সে আর্শিবাদ কামনা করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। ফরহাদ আজাদ সাহেবকে আর কোনোদিন ক্লাসে পাব না ভাবতেই খারাপ লাগছে। সহকর্মী হিসেবে তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৩২টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তিনি নিজে তৈরি করেছেন যাদের অনেকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজ সন্তানদেরকে যেভাবে মানুষ করেছেন, তেমনি করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনি যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি।

বিদায়ী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক অসীম চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক রহিম বেগম, মাওলানা আলী আহামদ কাসেমী, সব্যসাচী বিশ্বাস, মিতালি রানী সুশীল, ইলা দাশ গুপ্তা, দীপক বড়ুয়া, চম্পা বৈদ্য, ধীমান চৌধুরী, জুহি সেন গুপ্তা, গিয়াস উদ্দিন, আলমগীর, বোরহান, পলাশ দাশ, রাম চৌধুরী, দেবাশীষ দে, ইকবাল হোসেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আজগর, খায়রুল বশর, রবিউল হোসেন চৌধুরী, মুকতুম উল হক, আরিফ, সাব্বির প্রমুখ। এছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ।

আরবি/জেডআর

Link copied!