ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আসাবুল হক। বাড়িতে বসেই গোবর ও কেঁচো ব্যবহার করে এই জৈব সার তৈরি করছেন তিনি। তার উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব এবং মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করা এ সারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই সার মাটিকে তাজা করে। কোনও ক্ষতিকর দিক
নেই। দামেও বেশ সস্তা। তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের পিতম্বরপুর গ্রামের আসাবুল হক। সংসারের অভাব-অনটন কাটাতে চায়ের দোকানের পাশাপাশি ভেড়া পালন শুরু করেন। এতেও সফলতা না পেয়ে “একটি বাড়ি, একটি খামার” প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গোবর দিয়ে জৈব ও ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন বিষয়ে জানতে পারেন। গ্রামে ফিরে এসে ৭ টি রিং দিয়ে এ সার উৎপাদন শুরু করেন।
উদ্যোক্তা আসাবুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ২০১৭ সালে কৃষি খামার প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাড়িতে ৭ টি রিং দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি। দিনে দিনে বড় হতে থাকে খামারটি। বাড়ির পাশে জমি লিজ নিয়ে খামারের পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। গ্রামে আরও দুটি স্থানে দুটি খামার রয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ মিলে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে। সিজনে ১০০ মেট্রিক টন জৈব সার ও মাসে ১০০ মেট্রিক টন ভার্মি কম্পেস্ট সার উৎপাদন হয়। বছরে ৫০ লাখ টাকার সার বিক্রি হয়। এছাড়াও অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ সার সরবরাহ করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, সার উৎপাদনের জন্য চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বেশ কিছু জেলা থেকে গোবর সংগ্রহ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কেঁচো থেকে সার তৈরির জন্য ১ মাসের পুরাতন গোবর লাগে। কেঁচো গোবর খাওয়ার পর যে মল ত্যাগ ও বমি করে তা থেকে ভার্মি কম্পেস্ট সার উৎপাদন করা হয়।
স্থানীয় কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সারের দাম কম। তাই আমরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার শুরু করেছি। ভালো ফলও পাচ্ছি। এই সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়ছে, মাটির ক্ষতি হচ্ছে না। ফলনও ভালো পাচ্ছি।
একই এলাকার আরেক কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার সবজি বাগান রয়েছে। আগে ব্যাপক হারে নানান রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হতো। আসাবুল হকের কেঁচো সার উৎপাদনের পর থেকেই এ সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে আমার খরচও কমেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আফরিন বিনতে আজিজ বলেন, জৈব সারের রয়েছে নানান উপকারিতা। ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়। সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মাটির গঠন ও প্রকৃত গুণ রক্ষা করে। মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ার ফলে চাষিরাও এই সার ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :