ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারলেন সড়কের কাজ শুরু করেছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন একে-দুয়ে ধীরে ধীরে ফিরছেন প্রকল্প এলাকায়। ফলে প্রায় ৩ মাস পর ৪ নভেম্বর সোমবার ঘাটুরা এলাকায় কাজ শুরু করতে দেখা যায়। কাজ বন্ধ থাকায় মহাদুর্ভোগের নাম হয়ে উঠেছিল দেশের পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফোরলেনের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত ২৭শে অক্টোবর জেলা প্রশাসকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যাতে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, ফোর লেন প্রকল্পের ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও তাদের উপকরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সভাটি হয় বলে জানান তিনি।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ জানান, ৪ নভেম্বর পুলিশ নিরাপত্তায় কাজ শুরু হয়েছে। গত ২৬শে অক্টোবর থেকে ১/২জন করে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসেছেন। যন্ত্রণাপাতি মেশিন অপারেটররা আসছেন। এই মুহূর্তে রাস্তার কাজ করার মতো মালামাল কম থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ঘাটুরা ব্রিজের কাজ শুরু করেছে এবং আমরা তাদের বলেছি, আগে রিপেয়ার কাজ এবং ধুলা নিবারণে পানি দেয়া। এজন্য তারা পানির ট্যাঙ্কার ভাড়া করছে।
সরকার পতনের পর এই সড়ক নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। গত ১০ই আগস্ট ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে যান তাদের নিজ দেশ ভারতে। কাজ বন্ধ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় দুর্ভোগ ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়।
এই সময়ে জেলা প্রশাসক বার বার সরকারের ওপর মহলে একাধিক চিঠিতে দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। সড়কে জনদুর্ভোগ লাঘবে এর মেরামত কাজের অনুমোদনও দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপরই গত ২৭শে সেপ্টেম্বর সড়কটি পরিদর্শন করতে আসেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। ভারতীয় ঠিকাদার আসছিল না, আবার সরকারি অর্থে মেরামত কাজও হচ্ছিলো না। ফলে দুর্ভোগ দিন দিন বাড়তেই থাকে। বৃষ্টি হলে দেখা দিত দুর্ঘটনা ও পানি জমাট আবার বৃষ্টি না হলে ধুলোয় দেখা যেত না রাস্তা চরম দুর্ভোগে চলতো যানবাহন ও যাত্রী।
আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ফোর লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০শে জুন। শুরু থেকে করোনা মহামারী ও নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। তিনটি প্যাকেজে চলা এই কাজের মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ পার্সেন্ট। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ।
আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে। নির্মাণকাজ অসম্পন্ন থাকায় আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে তন্তর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ ও সরাইল গোলচত্বর, ঘাটুরা মেডিকেল কলেজ, বিরাশার, মধ্যপাড়া, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা, উজানিসার এলাকায় দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সাময়িক মেরামতের চিন্তা-ভাবনাও করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :