ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সমন্বয়ক পরিচয়ে যুবলীগ নেতা, পিতা-পুত্রকে খুঁজছে পুলিশ

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:০১ পিএম

সমন্বয়ক পরিচয়ে যুবলীগ নেতা, পিতা-পুত্রকে খুঁজছে পুলিশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিএনপি নেতাকে বিতর্কিত করতে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে মামলা করা আলোচিত বগুড়ার আশরাফুল আলমকে খুঁজছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বগুড়া শহর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও শিবগঞ্জে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি, মারপিটসহ ছিনতাইয়ের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। আশরাফুলের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মুশফিক আকাইদ ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ভাগকোলা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুলকে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী শহর ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমান রকি।

বৃহস্পতিবার বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন জানান, ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি আশরাফুল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকে খুঁজছে পুলিশ। মামলার সকল আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ সমর্থক ও শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট আশরাফুল আলম মোকামতলা ভাগকোলা এলাকার মৃত বশির উদ্দিন মুনশির ছেলে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ গত ১০ অক্টোবর বগুড়া সদর থানায় আশরাফুলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকায় ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আশরাফুল উপস্থিত ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলার বাদী আরিফুর রহমান রকি বগুড়া শহর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

মামলার বরাত দিয়ে সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দীন জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে কালিতলা এলাকায় বগুড়া শহর ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে বসে তালিকা প্রস্তুত করার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতে পিস্তল, ককটেলসহ অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ‍‍`ধর ধর বিএনপি ধর স্লোগান দেয়। আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ যানবাহন ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থলে অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল পড়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত ৩ নভেম্বর বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (শিবগঞ্জ) আদালতে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বগুড়া সদরের নিশিন্দারা এলাকার ব্যবসায়ী আবু সাইদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী বলে জানিয়েছেন। মামলায় শিবগঞ্জের আশরাফুল আলমকে প্রধান আসামি এবং তার ছেলে মোকামতলা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মুশফিক আকাইদকে ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা হাইস্কুলের গেটের সামনে ব্যবসায়ীর পথরোধ করে গুম ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসামিরা তিনলাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ীকে মারপিট করে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। মামলাটি আমলে নিয়ে বগুড়ার পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক আহসান হাবিব।

মামলার বাদী আবু সাইদ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আশরাফুল ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা মুশফিক আকাইদ নিজেদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করেছিল। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দলীয় কোন্দলে যুবলীগ নেতা মুশফিককে পুলিশে ধরিয়ে দেয় তাদের দলের নেতারা। এরপর থেকেই ছেলেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেন আশরাফুল। 

মোকামতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দৌলা রুবেল বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং বিএনপির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। শেখ হাসিনার পতনের পর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি শুরু করলে তাদের প্রতিহত করতে একাট্টা হয় বিএনপি। 

অভিযুক্ত আশরাফুল আলম ও মুশফিক আকাইদ গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

আরবি/জেডআর

Link copied!