সাভারে ন্যাশনাল ব্যাংকে জমা রাখা গচ্ছিত টাকা না পেয়ে ব্যাংকের ভিতরে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকরা। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তুলতে না পারায় এ বিক্ষোভ করেন তারা। টাকা না থাকায় সেবা দিতে পারছে না বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরআগে গত সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা করে তোলা গেলেও জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাজার রোড এলাকার ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেন। কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা না পাওয়ায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হন।ন্যাশনাল ব্যাংকসহ দেশের কয়েকটি ব্যাংকে টাকার তারল্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ ব্যাংকগুলো থেকে লক্ষাধিক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপসহ কয়েকটি শিল্প কোম্পানি। সেই ঋণের টাকা তারা এখন পরিশোধ করতে পারছে না। এতে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে নিজেদের প্রয়োজনের টাকা তুলতে এসে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা পাচ্ছেন না তারা। গত সপ্তাহে গ্রাহকরা ১০ হাজার টাকা করে তুলতে পারলেও আজ তারা কোনো টাকা পাচ্ছেন না। কর্মকর্তারা টাকা না থাকার অজুহাতে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এতে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ অবস্থার তারা দ্রুত সমস্যার সমাধান চান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, আমার ১৮ বছর বয়স থেকে আব্বু আমাকে এই ন্যাশনাল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে দেন। তখন থেকে আমার সব সঞ্চয় এই এক ব্যাংকে। এত দিন টাকা তুলিনি। এখন আমার প্রয়োজন। দুই মাস ধরে ব্যাংকে ঘুরছি, টাকা পাই না। আগে যাও দিতে পেরেছে, এখন দিনকে দিন আরও টাকা দেয় না বললেই চলে। সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে পারছে না। আম্মার অপারেশনের জন্যও টাকা তুলতে পারিনি। আমি আমার টাকা সময়মতো না পেলে কী লাভ?
ধামরাইয়ের ইসলামপুর থেকে আসা সোনিয়া শিকদার বলেন, আমি এখানে ৩ লাখ টাকা রেখেছি। নিজের প্রয়োজনে টাকা দরকার কিন্তু এক দিনে দেয় ১০ হাজার টাকা। এরপর দিয়েছে ৫ হাজার করে। আজ এসেছি, বলে কোনো টাকাই নাই। চলে যান। নিজের প্রয়োজনে টাকা রেখেছি। যদি না পাই। তাহলে এখানে রেখে তো লাভ হচ্ছে না।
পারভীন বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে ১৪ লাখ টাকা রেখেছি। এখন আমার বড় অপারেশনের জন্য ৩ লাখ টাকা তুলবো। ১০-১২ দিন ঘুরে টাকা তুলতে পারছি না। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। ১০ হাজার টাকাও তুলতে পারছি না। এখন কোনো টাকাই নেই ব্যাংকে। খুব বিপদে পড়েছি। ব্যাংকে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছেন না বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাভার বাজার শাখার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার মো. হাসিনুর রহমান বলেন, আমরা স্বাভাবিক লেনদেন করছিলাম। গ্রাহকের যা টাকা প্রয়োজন আমার এখানে গ্রাহকেরা নিতে পারছিলেন। প্রতিনিয়ত গ্রাহকের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। আবার গ্রাহকের জমার পরিমাণ ক্রমে ক্রমে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। কারণ গ্রাহকের আস্থার সঙ্কট। আমাদের দাবি বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে আমাদের রক্ষা করে।
সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সদস্যরা ব্যাংকে অবস্থান নিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :