ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

ভোগান্তিতে ঘোড়াশাল পৌরসভার নাগরিকরা

মাহবুব সৈয়দ, পলাশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম

ভোগান্তিতে ঘোড়াশাল পৌরসভার নাগরিকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একের পর এক প্রশাসক পরিবর্তনে ঝিমিয়ে পড়েছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর সভার নাগরিক সেবা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সেবা প্রত্যাশীরা। নিয়মিত প্রশাসক ও কাউন্সিলর উপস্থিত না থাকায় জন্ম- মৃত্যু সনদ, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবা গ্রহিতাদের। এ অবস্থায় দ্রুত স্থায়ী সমাধান চান পৌরসভার নাগরিকরা।
ঘোড়াশাল পৌরসভা কার্যালয় থেকে ১৪ ধরনের নাগরিক সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম সেবা হচ্ছে জন্ম, নাগরিক ও মৃত্যুর নিবন্ধন। 

এছাড়া চারিত্রিক, উত্তরাধিকারী, আয়, পারিবারিক সদস্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদও দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রত্যয়ন, অনাপত্তিপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর দিতে হয় কাউন্সিলরকে। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকি এবং টিসিবির পণ্য বিতরণের কাজও পরিচালিত হতো কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই সারাদেশের ন্যায় পলাশের ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। সমস্যা সমাধানে দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেয় অন্তর্র্বতী সরকার। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টনের তিন মাস পার হলেও স্থবিরতা কাটেনি নরসিংদীর প্রথম শ্রেণির ঘোড়াশাল পৌরসভায়। এই পৌরসভায় গত তিন মাসে প্রশাসক পরিবর্তন হয়েছে ৪ বার। এরই মধ্যে পৌর নাগরিকরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নিতে এসে প্রশাসক না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চরম ভাবে। পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদপত্র পেতেও ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন। সাড়ে ২৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঘোড়াশাল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। এখানে নাগরিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত পৌরসভায় সরাপর্ণ হতে হয়। জনপ্রতিনিধি অপসারণের পর পৌরসভাটিতে ৪ দফা প্রশাসক পরির্বতন করা হলেও স্থায়ী হয়নি একটিও। এতে করে কাজের ব্যাঘাত পেতে হচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারিদেরও।

এদিকে কাউন্সিলর না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবা নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এদিকে কাউন্সিলররা না থাকায় টিসিবি পণ্য বিতরণেও নানা অনিয়ম হচ্ছে। আগে টিসিবি পণ্য বিতরণের জন্য কাউন্সিলররা ওয়ার্ডের সকল কার্ডধারী উপকারভোগীদের জানাতেন। বর্তমানে ওয়ার্ডের অনেক কার্ডধারী নাগরিক জানেন না কোনদিন টিসিবি পণ্য বিতরণ হচ্ছে। সরেজমিনে ঘোড়াশাল পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে পাওয়া যায় কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে। বেশির ভাগই এসেছেন জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে। অন্যদিকে আরো অনেকে নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ এবং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

নাগরিক সেবা নিয়ে কথা হয় ঘোড়াশাল পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, আমার ছেলে বর্তমানে প্রবাসে বসবাস করছেন। তার পাসপোর্টেও মেয়াদ শেষ হওয়ার জরুরি ভিক্তিতে তার ছেলের ডিজিটাল জন্ম সনদের প্রয়োজন। গত ১মাস যাবৎ ঘুরতেছি কিন্ত ছেলের জন্ম সনদ পাই না, প্রতিদিন অফিসে গেলে বলে স্যার নেই,স্বাক্ষর হয়নি।এদিকে আমার ছেলের পাসপোর্টেও মেয়াদও শেষের পথে। কি করবো বুঝতে পারছি না।

পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কমল মিয়া, সোহেল মিয়া ও মজিদা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন আগে দুপুর ১টার দিকে আমরা হঠাৎ খবর পাই আটিয়া স্কুলে টিসিবি পণ্য বিতরণ হচ্ছে। দৌঁড়ে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে ডিলারকে পণ্য দেওয়ার কথা বললে পণ্য শেষ হয়ে গেছে বলেন। বিগত দিনে কাউন্সিলর থাকাবস্থায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হতো এবং পৌরসভার ফেসবুক পেইজে টিসিবি পণ্য বিতরণের বিষয়টি জানানো হতো। কিন্তু কাউন্সিলর থাকাবস্থায় কোনদিনই টিসিবি পণ্য না নিয়ে বাড়ি ফিরিনি। সাবেক পৌর কাউন্সিলররা
বলেন, ‘আগে এক দিনে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে দিতাম। এখন লাগে এক সপ্তাহ। নাগরিকত্বের সনদ দিতে আগে লাগত পাঁচ মিনিট, এখন লাগে পাঁচ-ছয় দিন।’ এছাড়া টিসিবি পণ্য বিতরণ হলে আমরা ওয়ার্ডের কার্ডধারী সকল নাগরিকদের জানিয়ে দিতাম।

পৌরসভায় সেবা নিতে আসা নাগরিকদের আরও অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু, নাগরিকত্ব সনদসহ ১৪টি সনদ সহজে পাওয়া এখন দুষ্পাপ্য হয়ে পড়েছে। আগে কাউন্সিলর থাকতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা পাওয়া যেত। বর্তমানে সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের। যারা কিনা পৌরসভার নাগরিকদের ভালো করে চিনেন না। এজন্য বিভিন্ন সনদ নিতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগছে। সনদের জন্য প্রথমে যেতে হচ্ছে যাচাই বাছাইয়ের জন্য পৌর প্রশাসকের সহায়তার জন্য গঠিত পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বরত পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে,তাদের স্বাক্ষর নিয়ে যেতে হচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্বরত উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে। তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আসতে হয় পৌরসভায়। পরে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বরত উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বাক্ষর করলে পাওয়া যায় কাঙ্খিত সনদ। বর্তমানে পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম ফখরুল হোসাইন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার,উপজেলা চেয়ারম্যানের ও পৌরসভার প্রশাসকের পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন,ওয়ার্ডের নাগরিকদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে নাগরিক সেবা দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।
 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, যাচাইকারী হিসেবে আগে কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করতেন, এখন সেটি আমাদের করতে হচ্ছে।তাই অনেক সময় তাদের আমরা চিনি না, এলাকায় গিয়ে যাচাই বাছাই করে স্বাক্ষর দিতে হয়।

এ ব্যাপারে পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজেল হোসেন হাওলাদার বলেন,পৌর নাগরিকদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আমরা দ্রুত সেবা দিয়ে থাকি তাদের।

ঘোড়াশাল পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) পৌর প্রশাসক এ.এইচ.এম ফখরুল হোসাইন বলেন, আগে কাউন্সিলররা যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর করতেন, এখন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তারা এ কাজটি করতে হচ্ছে।তারা সবাইকে না চেনার ফলে যাচাই-বাছাই করতে একটু বিলম্ব হয়। তবে আমার কাছে আসার পর দ্রুত আমি পৌরসভার কাজ গুলো করে দিচ্ছি।

এদিকে নাগরিক সেবা ভোগান্তি বন্ধসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌরসভাটিতে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা নিবে সরকার এমনটাই আশা পৌর নাগরিকদের।

আরবি/জেডআর

Link copied!