ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কুষ্টিয়ায় পাবলিক টয়লেটে তালা, ব্যবহার অনুপযোগী বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুষ্টিয়ায় পাবলিক টয়লেট গুলোতে ঝুছে তালা। কোনটি ব্যবহার খোলা থাকলেও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে যত্রতত্র মল-মুত্র ত্যাগ করায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমন চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পাবলিক টয়লেট গুলোর। পৌরসভার হলবাজার-বাসস্টান্ড-উপজেলা সড়ক, কাজীপাড়া মোড় সড়ক এবং হলবাজার-পায়রামোড় সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। শহরটিতে গার্মেন্টস, কসমেটিকস, মুদি, জুতা-স্যান্ডেল, সুতা, ফার্মেসী, ফল, কাঁচামালসহ হরেকরকম ছোট বড় অন্তত তিন হাজার দোকানপাট রয়েছে। এখানে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার নানা বয়সি নারী-পুরুষের আনাগোনা হয়। তবে পাবলিক টয়লেট গুলো ঠিক না থাকায় চরম ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পুরুষরা স্থানীয় মসজিদের টয়লেট ও চিপাচাপায় মলমূত্র ত্যাগ করলেও নারীদের বেলায় তারও সুযোগ নেই। আবার যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে নানান রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি। সেজন্য শহরের আগতরা দ্রুত স্বাস্থ্য সম্মত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানান।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন বলেন, সুস্থ থাকার জন্য সময়মতো মলমূত্রত্যাগ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘক্ষণ মলমূত্র চেপে রাখলে কিডনি, লিভার, গ্যাস্ট্রিকসহ নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা থাকে। পাবলিক টয়লেট স্থাপনের জন্য জনস্বার্থ প্রকৌশলী ও পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে তিনি জানান। জানা গেছে, ২০১৪- ১৫ অর্থবছরে কুমারখালী বাসস্টান্ড সংলগ্ন হানিফ কাউন্টারের পিছনে একটি পাবলিক টয়লেট স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। তবে টয়লেটটির ট্যাংকি আকারে ছোট হওয়ায় ব্যবহারের কয়েক মাসের মধ্যেই তা ভরে যায়। তবুও ব্যবহারের ফলে মলমূত্রাদি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশ দূষিত হয়। ফলে এলাকাবাসীর নানান অভিযোগে ওই অর্থবছরেই তালা লাগিয়ে দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ট্যাংকি ছোট হওয়ায় টয়লেটটি চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই তা ভরে যায়। সেসময় মলমূত্রাদি আশপাশে ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। তাই পৌরসভা ট্যাংকি সংস্কার না করেই তালা লাগিয়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ২০১৭ সাল থেকে ওই টয়লেটটির সম্মুখে চায়ের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বাসস্টান্ড এলাকায় একটি পাবলিক টয়লেট অতি জরুরি। প্রতিদিন কয়েক শত মানুষ এখানে এসে ফিরে যান। মলমূত্রত্যাগের জন্য তারা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে বেড়ায়। 

একই অর্থবছরে সমপরিমাণ ব্যয়ে পৌরসভার কাজীপাড়া মোড় এবং শেরকান্দি এলাকার কাপুড়িয়া হাট এলাকায় একটি করে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে জনস্বার্থ প্রকৌশলী।

সেগুলোরও চাহিদার তুলনায় ট্যাংকি ছোট। ব্যবহারের কয়েকমাসের মধ্যেই তা পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই কাজীপাড়া মোড়ের পাবলিক টয়লেটটিতেও তালা লাগানো হয়েছে। আর সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাপুড়িয়া হাটের টয়লেটটি।

কুমারখালী বণিক সমিতির সভাপতি কে আলম  বলেন, বণিক সমিতিতে প্রায় ৩৫০ টি দোকান রয়েছে। তারা পৌরসভাকে নিয়মিত ট্যাক্স (কর) প্রদান করে। তবে সমিতির আশপাশে একটি পাবলিক টয়লেটও নেই। প্রয়োজন মেটাতে ছেলেরা পাশের মসজিদে যায়। সেখানেও সিরিয়াল ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর মেয়েরা তো লজ্জা শরমে চেপে রাখে। তাঁর ভাষ্য, পাবলিক টয়লেট না থাকায় মানুষের ভোগান্তি ও বিরম্বনার শেষ নেই। তিনি দ্রুত পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবলিক টয়লেট স্থাপনের দাবি জানান।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, শহরে অন্তত ছোট বড় তিন হাজার দোকান রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে অন্তত ৫০ হাজার নানা বয়সি মানুষ ছুটে আসেন। এসব মানুষের মলমূত্র ত্যাগের জন্য দ্রুত পাবলিক টয়লেট স্থাপনের দাবি তার। আরো জানা যায়, ২০১৮ সালে সোনাবন্ধু মার্কেটে আরও একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। সেটিরও ট্যাংকি ছোট হওয়ায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। সেখানকার ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগে টয়লেটটি স্থানান্তরের জন্য গতবছরের ডিসেম্বরে তা ভেঙে ফেলেন পৌরকর্তৃপক্ষ। তবে ওই এলাকায় নতুন করে আর কোনো টয়লেট নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

এ বিষয়ে সোনাবন্ধু সড়কের চা ও বেকারী ব্যবসায়ী প্রহল্লাদ সেন বলেন, শৌচাগার নেই। মানুষ যত্রতত্র মলমূত্রত্যাগ করছে। এতে পরিবেশ আরো দূষিত হচ্ছে। শহরে শৌচাগার না থাকায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই প্রস্তুতি নিতে হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী। 

তিনি বলেন, এতোবড় শহরে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্মাণ ত্রুটির কারণে ট্যাংকির আকার ছোট হওয়ায় পাবলিক টয়লেট গুলো অকেজো বলে জানিয়েছেন কুমারখালী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. আকরামুজ্জামান।

তিনি বলেন, এ নিয়ে কয়েক বছর ধরে বিরম্বনা পোহাচ্ছেন মানুষ। পৌরসভার পাবলিক টয়লেট অকেজো এবং ভাঙার বিষয়টি জানেন না উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আলামিন। 

তিনি বলেন, নকশা অনুযায়ী স্থাপনাদি নির্মাণ করা হয়েছে। তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষনের দাঁয়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। তালা লাগানোর বিষয়টি জানেন না উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক এস এম মিকাইল ইসলাম।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তালা খুলে দেওয়া হবে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে অকেজোগুলো সংস্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।