নবগঠিত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত সদস্যদের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসুচি করেছে রাঙামাটি জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা পরিষদের প্রধান গেইট বন্ধ করে দিয়ে তারা ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসুচি পালন করে। পরে পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে তারা কর্মসুচি স্থগিত করেন। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের পুনঃগঠিত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের ভিতরে রেখে গেইট বন্ধ করে দিয়েছে রাঙামাটি জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন নেতারা।
এদিকে অবস্থান কর্মসুচি চলাকালে নবনিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে ভিন্ন অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা রাকিব, মো. সাজিদ হোসেন, মোস্তফা কামাল রাজু, আবু আবরার আলভি, তুহিন হাসান, ইমাম হাসান, সাইদা ইসলামও তানভি আক্তারসহ আরো অনেকে।
এসময় তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ঘরোয়া লোকজন, বিগত সরকারের সময় সুবিধাপ্রাপ্ত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে বিরোধীতাকারী লোকজন সদ্য গঠিত জেলা পরিষদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট খুনির দোসরদের এসব পদে বসানো শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা পরিষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের মতামত নেয়া হয়নি। পার্বত্য উপদেষ্টার এ হেন বৈষম্যমূলক আচরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন মেনে নিবে না। তারা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রæত সময়ের মধ্যে অপসারণের দাবি জানান। দাবি মানা না হলে সকল সম্প্রসায়কে নিয়ে পাহাড়ে বৃহত্তর কর্মসুচি ঘোষণা করা হবে। এসময় রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) মোঃ সাইফুল ইসলাম পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাথে কথা বলে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বৈঠক করে দেওয়ার আশ্বাসে অবস্থান কর্মসুচি স্থগিত করেন।
প্রসঙ্গত, এছাড়াও পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় রয়েছেন বেশ কয়েক জন। যাদের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টার একান্ত সহকারীও উপদেষ্টার সাথে বিগত সময়ে চাকুরী করা ইউএনডিপির সহকর্মীও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহকর্মীরা। পাশাপাশি জনগণের গ্রহণযোগ্য,বিশিষ্টজনও বহুল পরিচিত হিসাবে যাদের নাম আলোচনা –প্রস্তাবনায় ছিল, পুনর্গঠিত পরিষদে তাদের কেউ নেই। বিপরীতে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ আলোচনা-প্রস্তাবনায় ছিলেন না। কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ সদস্য জনগণের কাছে অপরিচিত, অগ্রহণ যোগ্যও বিতর্কিত। গুরুত্বপূর্ণ চার উপজেলা থেকে কোনো প্রতিনিধি না নিয়ে, সে সব উপজেলার শূন্যস্থান সদর থেকে পূরণ করে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে মনোনীত রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা হলেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার মনোনীত সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদের সদস্যও দুর্নীতিবাজ রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ নেতা রেমলিয়ানা পাংখোয়ার বড় ভাই লাল ছোয়া পাংখোয়াার স্ত্রী,রয়েছে তারই ভাতিজা ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া।
এছাড়াও রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যাও প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাবেক কর্মস্থলের (ইউএনডিপি) সহকর্মী। বৈশালী চাকমাও সুপ্রদীপ চাকমার নিকট আতœীয় এবং প্রতিবেশী। সাগরিকা রোয়াজা এককালে জাতীয় পার্টি করতেন পরে আওয়ামী লীগে যোগদেন তিনিও উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাবেক কর্মস্থলের (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড) এর সহকর্মী ডজি ত্রিপুরা। বরুন বিকাশ দেওয়ান। সাবেক ফুটবল খেলোয়ার। বিগত ফ্যাসিস সরকারের সাংসদ দীপংকর তালুকদারের একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ফ্যাসিস সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। দীপংকর তালুকদার তাকে জাতীয় পুরষ্কারেরও ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাঙামাটিতে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুস শুক্কুর স্টেডিয়ামকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নাম কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। বেশ দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো বরুনের বিরুদ্ধে। ক্যসিংমং মারমা কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম মৌজার হেডম্যান। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রঞ্জাপন হওয়ার পর এলাকায় প্রচার হয়েছে তিনি কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অংশুসাইন চৌধুরীর তদবিরে সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন।
নারী সদস্য নাইউপ্রু মারমা রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বাচ্চুমং মারমার স্ত্রী। লুৎফুন্নেসা বেগম হলো বিগত ফ্যাসিস সরকারের সাবেক বনও পরিবেশ এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদের পারিবারিক এনজিও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশনের পাটনার সংস্থা পর্বত মানব উন্নয়ন সংস্থা-পাড়ার নির্বাহী পরিচালক আব্বাস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। বিগত সময়ে তার কথিত এনজিও পাড়ার মাধ্যমে জেলা জলবায়ু ফান্ডের কোটি কোটি টাকা আতœসাৎ করার অভিযোগ।
এবিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকাও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে সংবাদ প্রচার হয়েছে। আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতিও রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর বোনের দেবর। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী হিসেবে পরিচিত। সেই সুবাদে আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী একবার দুদক রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিল। নিজে সুযোগ না পেয়ে তার স্ত্রীকে পদটি পাইয়ে দেয়। সদস্য দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। প্রায় সময় চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। নানিয়ারচর উপজেলা থেকে অপর সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা তিনি বুড়ি ঘাট ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ইউপিডিফের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে বর্তমানে এলাকায় নিয়মিত থাকেন না বলে জানা গেছে। সদস্য দেব প্রসাদ দেওয়ান। তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং ডিগ্রি কলেজের অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ। আগামী ডিসেম্বর মাসে ওনার অবসরত্তোর ছুটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি সকলের নিকট স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তবে একটু জেএসএস ঘেষা লোক বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অপর দিকে সদস্য মিনহাজ মুরশিদ লংগদু উপজেলার বাসিন্দা হলেও ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া কালীন সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইনানের রুমমেট ছিলো এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। ইনানের সাথে তার কর্মকান্ডের ছবি ফেসবুকে সয়লাব হয়ে আছে। জনশ্রুতি ছিলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকীয় পদের জন্য মনোনীত ছিলো সে। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে মিছিল মিটিং এ অংশ গ্রহন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্য পরিচয়ে জেলা পরিষদের সদস্য পদ ভাগিয়ে নেন। অপরদিকে হাবিবে আজম পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বাঙালি ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করলেও তিনি ফ্যাসিস সরকারের সাবেক সাংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের পৃষ্টপোষকতায় তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
ইতিমধ্যে তার এসব কর্মকান্ডের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য হাজি মুছা মাতব্বরের ভাতিজি জামাই হাবিব আজম। এধরনের বিতর্কিত লোক নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠিত পরিষদকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে বলে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অনেকের মন্তব্য লক্ষ্য করা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :