ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ইউটিউব দেখে কমলা চাষে সফল প্রবাস ফেরত যুবক

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম

ইউটিউব দেখে কমলা চাষে সফল প্রবাস ফেরত যুবক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে প্রবাস ফেরত যুবক মো: খোকন মিয়া ইউটিউব দেখে কমলা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন জেলা জোরে। তিনি ইউটিউবে দেখে কলমা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামে ২বিঘা জমিতে ৬০টি দার্জেলিং ও ১০০ টি চাইনা থ্রি কমলা চারা রোপণ করে বাগান গড়ে তুলেছেন। যা দেখে নানা টিপ্পনী, ঠাট্টা ও কটুকথা বলতে থাকেন এলাকার মানুষ বলছেন কমলা চাষ এখানে হবে না বলে। এসবে দমে যাননি খোকন। দুই বছরের মধ্যেই কমলা চাষে সাফল্য এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ১৬০টি গাছে আসে বিপুল কমলা। গাছ থেকে পেড়ে এখন বাগানেই কমলা বিক্রি করছেন খোকন।

মো. খোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চতুরপুর গ্রামের বাসিন্দা। মা বাবা ও ৩ বোন এবং স্ত্রী ৩ সন্তান নিয়ে খোকনের পরিবার। দীর্ঘ ৮ বছর মালেশিয়ায় প্রবাসে থাকার পর গত ২০২১ সালের মার্চ মাসে কমলা চাষের উদ্যোগ নেন। প্রায় আড়াই/ তিন বছর আগে ইউটিউবে চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তির কমলার চাষ দেখেন তিনি। এতে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। তারপর থেকে প্রায়ই ইউটিউবে ভিডিও দেখতেন কমলা চাষের। সুযোগ পেলে আশেপাশের জেলায় ছোট ছোট কমলার বাগানও পরিদর্শন করতেন। পরে সেখান থেকেই ১৪০ টাকা দরে কমলার চারা কেনেন। ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচে জমিতে কমলার  চাষ শুরু করেন।

মো. খোকন মিয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রথম দিকে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কমলার চাষ নিয়ে পরামর্শ করতে যান। স্থানীয়রা বলেছিলেন, এখানে কমলার ফলন হবে না, হলেও কমলা টক হবে।আবার অনেকেই কমলা চাষে ব্যার্থ হয়েছে।  মানুষজন নানা টিপ্পনী, ঠাট্টা, কটুকথাও বলেছেন। কিন্তু তিনি নিরাশ হননি। লোকজনের কথায় কান না দিয়ে কমলার চাষে মন দেন।গতবছর ১ হাজার থেকে বেশি কেজি কমলা বিক্রি করেছি। এবছর দ্বিগুণ ফলন এসেছে। প্রতি কেজি চায়না থ্রী কমলা ১৮০ টাকা কেজি ও দার্জেলিং কমলা ২৫০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বাগান থেকে ক্রেতারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়নি। দর্শনার্থীরা এসে দেখে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর আমার বাগান থেকে  অন্তত ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

এদিকে কৃষক খোকন মিয়ার কমলা চাষ দেখে এবার অন্য কৃষকরাও কমলা চাষ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এলাকার অনাবাদি জমিতে এবার কমলা চাষ করতে আগ্রহী স্থানীয় কৃষকরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে খোকনের কমলা বাগানের ছবি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন দর্শ্নার্থীরা।

একজন দর্শনার্থী মো. তসলিম মিয়া জানান, সব সময় আমরা বাজার থেকে কমলা ক্রয় করেছি। প্রথমবারের মত  আজ কমলা বাগান থেকে দেখে দেখে পাকা কমলা ক্রয় করলাম। ফর্মালিন মুক্ত সম্পূর্ণ অর্গানিক ফল পেলাম।

বিজয়নগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এ অঞ্চলে একাধিকবার কমলার চাষ করেও সুফল পায়নি ব্যর্থ হয়েছে অনেকেই। তবে যেহেতু খোকন মিয়া সফল হয়েছেন, তাই কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কমলার আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রর্দশনী দেয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিজয়নগরে আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায়  কমলা, মাল্টা,লেবু, চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ফলে বিভিন্ন পোকা রোগ বালাই দমন ও সার ব্যবস্থাপনা সহ প্রদর্শন করে থাকি।কমলা চাষে আগ্রহীদের সহযোগীতা ও কৃষিকাজে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!