শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম

সংস্কারে নান্দনিক হয়ে উঠছে লোহাগড় মঠ

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম

সংস্কারে নান্দনিক হয়ে উঠছে লোহাগড় মঠ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কার কাজ শুরু করায় নান্দকি হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনা লোহাগড় মঠ। ৫শ’ থেকে ৭শ’ বছর পূর্বে এসব মঠ নির্মাণ হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। নানা কু-সংস্কারের কারণে একসময় লোকজন মঠের কাছে না আসলেও এখন তা দুর হয়েছে। যে কারণে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এটির সংস্কার কাজ চলছে।

চাঁদপুর জেলা সদর থেকে এটির অবস্থান প্রায় ১৩ কিলোমিটার। ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজারের নিকটবর্তী লোহাগড় গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণে ছোট বড় তিনটি মঠের অবস্থান। পাশে বহু ফসলি জমি এবং আধা কিলোমিটার দূরে বসতবাড়ি এবং গ্রামের পাকা সড়ক।

সংস্কার দেখার জন্য যাওয়া হয় মঠ এলাকায়। গত প্রায় ৬ মাস পূর্বে এই মঠগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সবচাইতে বড় মঠ সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ বন্ধ হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ হয়নি বলে জানালেন শ্রমিকরা।

সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, আমরা এই সংস্কার কাজে কোন সিমেন্ট ব্যবহার করছি না। শুধুমাত্রা চুন এবং সুরকি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বড় মঠ সংস্কার কাজ শেষ করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। এরপর ছোট গুলোর কাজ করা হবে। প্রতিদিন ৪জন মিস্ত্রি এবং ৬ শ্রমিক কাজ করছি।

মঠ দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা মো. বারাকাত উল্লাহ বলেন, এই মঠ নিয়ে নানা কু-সংস্কার আছে। তবে গত কয়েক বছর এটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। স্থানীয়ভাবে কিছু অর্থ বরাদ্দ হলেও ঐতিহাসিক এই স্থাপনা সংরক্ষণ হয়নি। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কাজ শুরু করায় এটির নান্দনিকতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। এটির কাজ সম্পন্ন হলে এটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে রূপান্তর হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, আগে এখন খুব কম লোকজন আসত। গত কয়েকমাস শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছেন। লোকজন এটি দেখার জন্য আসছে। যে কারণে আমি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বসেছি। দুর দূরান্ত থেকে লোকজন আসলে কিছুটা হলেও সেবা দিতে পারব।

উপজেলার ধানুয়া গ্রাম থেকে মঠ দেখতে এসেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে লিমন নামে শিক্ষার্থী বলেন, মঠগুলো সংস্কার কাজ হচ্ছে শুনে দেখার জন্য এসেছি। এর আগেও এসেছি কয়েকবার। তবে এখন খুব সুন্দর লাগছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীন স্বপন মিয়া বলেন, এই মঠ আমাদের জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে একটি। এগুলো নিয়ে পূর্বের জনপ্রতিনিধিরা কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন শুনেছি। কিন্তু কি করা হয়েছে জানিনা। তবে এখন যেহেতু সরকারিভাবে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, আমাদের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা থাকবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস বলেন, গত অর্থ বছরে আমরা এই মঠগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। কাজ চলমান আছে। পুরো কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। আমরা শুধুমাত্র এগুলো রিমডেলিং করছি। যাতে করে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাগুলোর স্থায়িত্ব আরও বাড়ে। চুন ও সুরকি ব্যবহার হচ্ছে। এই কাজে সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে না। দেশের অন্য স্থানেও এভাবে কাজগুলো করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের কাজই হচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো প্রথম সংস্কার, পরে সংরক্ষণ এবং নান্দনিক করে গড়ে তোলা। এখানেও তা করা হবে এবং জনগণের সামনে এটির সৌন্দর্য উপস্থাপন করা হবে। মান সম্মতভাবে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের নিয়মিত তদারকি রয়েছে।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানাগেছে, আজ থেকে প্রায় ৪’শ থেকে ৭‍‍`শ বছর পূর্বে লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা এই এলাকাটিতে রাজত্ব করতেন। মঠের মত বিশালাকার দুটি প্রাসাদ। এই প্রাসাদেই জমিদাররা তাদের বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। বিভিন্নত তথ্যে যানা যায় প্রতাপশালী দুই রাজা লৌহ এবং গহড় ছিলেন অত্যাচারী রাজা। তাদের ভয়ে কেউ মঠ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যেতে শব্দ করতেন না। জনৈক এক ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তি ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, "কেমন রাজা রে এরা বাবু রাস্তা গুলো ঠিক নেই!”।পরবর্তীতে একথা জমিদারের গোলামরা শোনে লৌহ ও গহড়কে অবহিত করে।

কথিত আছে, ওই কর্তাব্যক্তির জন্য নদীর তীর হতে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়। যার প্রস্ত ছিল দুই হাত, উচ্চতা এক হাত ও দৈর্ঘ্য ২০০ হাত। পরবর্তীতে ঐ রাস্তাটিতে স্বর্ণ-মুদ্রা দ্বারা ভরিয়ে দেয়া হয় এবং যখন ওই ব্যক্তি রাস্তাটি ধরে আসছিলো তখন এ দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। রাজার শীর্ষরা তার প্রতি অত্যাচার করেন।

জমিদারী আমলে সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে পারতো না। বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে নৌকা চলাচল করতো নি:শব্দে। ডাকাতিয়া নদীর কুলে তাদের বাড়ির অবস্থানের নির্দেশিকাস্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শনস্বরূপ তারা মঠের শিখরে একটি স্বর্ণদ­স্থাপন করেন।

জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর ওই স্বর্ণের লোভে মঠের শিখরে উঠার অপচেষ্টায় অনেকে গুরুতর আহত হয়। শুধু তা-ই নয় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে বলেও শোনা যায়।
 

আরবি/জেডআর

Link copied!