ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

হামলার ভয়ে চার গ্রাম পুরুষশূণ্য

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম

হামলার ভয়ে চার গ্রাম পুরুষশূণ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুর্বৃত্তের হামলার ভয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডার চরকুভূলিয়া, চরগড়গড়ি, চরকাতরা ও গাফুরিয়া গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারের পুরুষ বাড়িছাড়া। এ সুযোগে এসব বাড়িতে হামলা চালিয়ে মহিলাদের মারপিট, গরু, মহিষ, ছাগল লুট, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের রাস্তাঘাটে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, বর্তমান সরকার যেন যৌথ বাহিনী দিয়ে লক্ষ্মীকুন্ডার চরের এসব দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে জনগণের শান্তি ফিরিয়ে দেয়।

জানা যায়, চারটি গ্রামে প্রায় ১৮-২০ হাজার মানুষের বসবাস। পেশায় প্রায় সবাই কৃষক। শান্তিপ্রিয় এসব মানুষের শাষ্টি নষ্ট করছে মাত্র ১৫-২০ জন দূষ্কৃতিকারী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট  শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর থেকেই এই চারগ্রামের মানুষের বসতবাড়ি, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও জনসাধারণকে মারপিটসহ ছিনতাই করার ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে। হামলার ভয়ে এখন এই গ্রামগুলোর অধিকাংশ পুরুষই এখন বাড়ি ছাড়া। আর এই সুযোগে বাড়িতে হামলা চালিয়ে মহিলাদের মারপিট, গরু, মহিষ, ছাগল লুট, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি। বিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা চললেও ভয়ে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। আবার সামনে চূড়ান্ত পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাও দিতে পারবে কিনা সেই সংশয়ও দেখা দিয়েছে। বাড়ি, দোকানপাটগুলো দূর্বৃত্তদের হিংস্রতার ধারালো অস্ত্রের স্মৃতি বহন করছে। বাড়ির মহিলা ভয়ে ও আতংকে মুখ খুলতে পারছে না। ১১ নভেম্বর সোমবার সকালে গ্রামগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ভীতস্থ পরিবারগুলোর এখন প্রাণের একটাই দাবী বর্তমান সরকার যেন যৌথবাহিনী দিয়ে লক্ষ্মীকুন্ডার চরের এসব দূর্বৃত্তদের দমন করে জনগণের শান্তি ফিরিয়ে দেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় ইয়াসিন প্রামাণিক, আরিফ প্রাংসহ প্রায় ২৫-৩০ জন সশস্ত্র বাহিনী হামলা চালিয়ে লুটপাট করছে। উপজেলার চরগড়গড়ি আনছার মোড়ের চায়ের দোকানদার রিজাই প্রামানিক, মুদিদোকানদার রফিকুল ইসলাম, স্যালুনের দোকানদার পরিতোষ সরকার বলেন, আমাদের দোকানে আওয়ামীলীগের লোকজন বসেন বলে গত শুক্রবার (৮নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে একদল সশস্ত্র বাহিনী তার দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার দোকানসহ মোড়ের অন্যান্য ৭ টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। মোড়ের লোকজনের বাড়িঘরের টিনের বেড়া কেটে ফেলেছে। আমাদের কিছুই বলার নেই। বললেই আবার হামলা ও মারপিটের শিকার হতে হবে।

চরকুড়ুলিয়া গ্রামের ভুক্তভোগি ছানাউল্লাহর স্ত্রী বিনা খাতুন বলেন, দুপুরে জুম্মার নামাযের সময় বাড়ির পুরুষরা মসজিদে গিয়েছিল। এই সময় প্রায় ৩০-৪০ জনের একটি সশস্ত্রদল তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে তাদের আতংকিত করে। বাড়ির সামনের কয়েকটি দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এরপর হামলাকারীরা তাদের বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর করে। গোয়ালঘর থেকে ৪ টি বড় সাইজের গরু নিয়ে যায়। আমাদের অপরাধ পরিবারের ছেলেরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে চরকুড়ুলিয়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলী প্রামানিকের ছেলে মো. ছানাউল্লাহ বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লুট হওয়া ৪ টি গরু উদ্ধার করে গরুর মালিকদের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।

আরবি/জেডআর

Link copied!