চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল মডেল ইউনিয়নের তেগুরিয়ায় স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়। এই নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও ২০০৮ সালে এসে বিদ্যালয়ের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ নাম পরিবর্তন করে তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নাম করণ করেন। এই অবস্থায় বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম কেন পরিবর্তন করা হলো সে জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন কচুয়ার বাসিন্দা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তার আবেদনটি খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। দীর্ঘ বছর পরে কোন রকম দাপ্তরিক অনুমোদন ছাড়াই আবারও পূর্বের নামে ফিরে এসেছে বিদ্যালয়টি। এটিকে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান গেট ও বিদ্যালয়ের ভবনে লেখা আছে ‘ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, তেগুরিয়া’। নাম পরিবর্তন নিয়ে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা হয় বিদ্যালয় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ভূমিদাতা একাধিক ব্যাক্তির সাথে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে উচ্চ আদালতে রীটের (রীট নং-৫৯৪২) পর বিদ্যালয়ের নামের বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুযায়ি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন তৎকালীন কচুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুসারে কোন ব্যাক্তির নামে বিদ্যালয়ের নাম করণের জন্য যেসব বিধি অনুসরণ করতে হয়, তার কোনটিই পাননি। যে কারণে তিনি বিদ্যালয়ের নাম তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় রাখার জন্য সুপারিশ করেন। দীর্ঘ বছর এই বিদ্যালয়টি তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হয়ে আসলেও গত ৫ আগস্টের পর ৬ আগস্ট স্থানীয় বাসিন্দা ও কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল নিজ অর্থায়নে তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয় লিখেন।
এই বিষয়ে সাইফুল বলেন, আমি নিজ অর্থ খরচ করে গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করেন। আমার মতে তারা একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এটি করেছিলেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও তেগুরিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে মো. সুলতান আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেন তৎকালীন এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তার সাথে কমিটির অন্যান্য লোকজনও জড়িত ছিলেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কি নাম এটি যাচাই করার জন্য যাওয়া হয় কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে উপজেলা সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইমরান জানান, আমাদের কাছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে দেয়া তথ্যে ‘তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম লিখা আছে।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, আমার সাথে তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে কেউ যোগাযোগ করেননি। কিন্তু ফোন করে আমাকে অনেকে জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি জেনে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের পাটোয়ারীর দুর্নীতি নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। তার বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লা চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মো. সুলতান আহম্মেদ। ওই অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নগদ অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া প্রধান শিক্ষক বিগত ১৫ বছর নিজের ইচ্ছেমত বিদ্যালয় পরিচালনা করেন এবং পরিচালনা পর্ষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেননি। তত্ত্বাবধানের অভাবে ভেঙে পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। ১ হাজার ১শ’ শিক্ষার্থীর স্থলে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্যের জন্য প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যাক্তিগত মোবাইলে ফোন দিলে তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতির কাছ থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে এসব অভিযোগ সঠিক না।
আপনার মতামত লিখুন :