স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিনমজুর জামাল মিয়া অবশেষে জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ মামুন দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
চার শিশু সন্তানের জনক জামাল মিয়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের চিত্রাপাড়া গ্রামের হারিজ মিয়ার ছেলে। বাবাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা জামাল হয়ে পড়ে জামাল মিয়ার ১৩ বছর বয়সী ছেলে সাজ্জাদ ও ৬ বছর বয়সী ফারিয়া। এছাড়াও ১ মাস ১০ দিন বয়সী জমজ দুই কন্যা সন্তান রয়ছে তার। এই দুই জমজ কন্যা সন্তান জন্মের ৬ দিনের জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম মারা যায়।
গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
সরেজমিনে জানাগেছে, গত একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার। এ অবস্থায় পুলিশ জামাল মিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। দিনমজুর জামাল মিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেন গোপালগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান।
তিনি বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে জামাল মিয়ার জামিন আবেদন করি। বিচারক আমাদের কথা বলার আগেই নথি হাতে পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন। হয়তো বিচারক আগে থেকেই জামাল মিয়ার চার বাচ্চার সংবাদটির বিষয়ে অবগত ছিলেন। মানবিক দিক থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ওই চার বাচ্চা ফিরে পেল তার বাবাকে।
এর আগে সকালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা নজরে নিয়ে শিশুদের দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজসেবা অধিদফতর ও গোপালগঞ্জের ডিসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক অফিসার হারুনুর রশিদ, সহকারি পরিচালক মিজানুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল ইসলাম শুভ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রাশেদুর রহমান চিত্রাপাড়া গ্রামে জামাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে নগদ টাকা, শিশু খাদ্য, গরম কাপড়, শিক্ষা উপকরণ, খেলনা সামগ্রী জামাল মিয়ার মা গোলেজান বেগমের হাতে তুলে দেয়।
এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিবারটিকে নগদ অর্থ এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেন। অপরদিকে জামাল মিয়ার জামিনের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবারসহ পাড়া-প্রতিবেশী আনন্দে ফেটে পড়ে।
জামাল মিয়ার মা গোলেজান বেগম তার ছেলের জামিনের খবর শুনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামাল মিয়া কোটালীপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামে নিজে বাড়ী এলে পৌছালে শতশত মানুষ জামাল মিয়া কে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসে।
এ সময় জামাল মিয়া বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের লেখনীর কারনে আমার পরিবারের করুণ পরিনতির বিষয় সকলের নজরে আসে। যে কারনে আজ আমি মুক্তি পাই। তিনি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :