ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

পাহাড়ের কলা শহরে গিয়ে দাম বাড়ে ৫ গুণ

আমিনুল ইসলাম খন্দকার, লামা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০২:১৬ পিএম

পাহাড়ের কলা শহরে গিয়ে দাম বাড়ে ৫ গুণ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কলা এমন একটি ফল যা সারা বছরই পাওয়া যায়। আর এর পুষ্টিগুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাই দেশজুড়ে এর চাহিদা ব্যাপক। পার্বত্য অঞ্চলে কলা চাষ হয় সব যায়গায়। চাহিদা থাকায় পাহাড়ের কলা শহরে গিয়ে দাম বাড়ে ৫ গুণ।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বান্দরবানের লামা উপজেলা শহর হতে ৯ কিলোমিটার পূর্ব অবস্থিত ইউনিয়নের  রুপসী পাড়া বাজারে  গিয়ে দেখা যায় কলার পরসা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের চাষীরা।

এই বাজার থেকে স্থানীয় পাইকারদের হাত ধরে পাহাড়ি কলা ট্রাক ও পিকআপে চকরিয়া, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা,  চাঁদপুর ও ঢাকাসহ দেশের বড় শহরে নিয়ে যান বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। শুধু রূপসীপাড়া থেকে সপ্তাহের হাটবারে ১০ থেকে ১২ হাজার ছড়া কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়।

এদিকে আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে পাহাড়ে কলা চাষের উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও কলা চাষিরা বরাবরই উপেক্ষিত হচ্ছে। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি কলার চাষ বাড়লেও বাড়েনি কলা চাষের সুযোগ-সুবিধা। দুর্গম যোগাযোগের কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের অভাবে উপযুক্ত দাম মেলে না।

রূপসীপাড়া বাজার ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা কলা ব্যবসাযীরা বাজারে ঘুরাঘুরি করে কলা দেখছেন। দামদর করে একটি কলা সাইজ অনুযায়ী ২ থেকে আড়াই টাকা বিক্রিয় হয় হাটে। এক ছড়িতে ৬০ পিস কলা থাকলে সেটি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বিক্রিয় হয়। আবার ছড়িতে ১০০ বা ১২০ পিস কলা থাকলে বিক্রিয় হয় ৩০০ টাকা দরে। পাইকারি হিসেবে কলার দাম আড়াই টাকা হয়। সেই কলা শহরে যেতে যেতে হাতবদল হয়ে দাম ৫ গুণ বেড়ে হয় জোড়া ২৫ টাকা।

পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক প্রকার কলা চাষ হলেও বাংলা কলার পরিমানই বেশি। চট্টগ্রাম শহরে চাকরি করেন স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হাসান বাপ্পি বলেন, এই বাংলা কলা আমরা চট্টগ্রামে জোড়া ২০ বা ২৫ টাকা করে কিনে খাই। তখন অবাক হই, আমার এলাকার কলা শহরে এতো  চড়া দাম।

৫ গুণ দামি কিভাবে বাড়ে তার কারন হিসেবে স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী মানিম মিয়া বলেন, কলা পচনশীল পন্য, সব কলা তো আর বিক্রি করা যায়না। আমরা যা ক্রয় করি এর মধ্যে ভালো খারাপ সব আছে। লেবার খরচ, পরিবহনে, স্থানান্তর ও বাজারজাত করতে গিয়ে কিছু কলা নষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, ৫০ হাজার টাকার কলা কিনলে আরো ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া লাইন খরচ তো আছে। স্থানীয় বাজারের ইজারাদারকেও টাকা দিতে হয়। সবকিছু মিলে ১ লাখ টাকার কলা দেড় লাখ টাকা বিক্রিয় করলে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়।

আরেক ব্যবসায়ী রফিক হায়দার বলেন, একটা কলার ছড়িতে ১শ কলা থাকলে তা ২ টাকা ধরে কিনলে ২শ টাকা হয়। এর পরিববহন খরচ পরে ৩০ টাকা, লাইন খরচ হয় ২০ টাকা, লেবার খরচসহ সব মিলিয়ে আরও ১শ টাকা দাম বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, শহরে পন্য যেমন পাহাড়ে এলে পরিবহন খরচ সহ দ্বিগুণ দাম বাড়ে, তেমনি পাহাড়ের পন্য শহরে গেলে দাম বাড়বে স্বাভাবিক।

কলা চাষিরা জানান, পাহাড়ে মাটিভেদে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়। এর মধ্যে দুই জাতের কলার আবাদ বেশি হতে দেখা যায়। একটি দেশি জাতের বাংলা কলা, অন্যটি চম্পা কলা। এ ছাড়াও চাপা, সরবি ও সাগর কলার আবাদ হয় এখানে। সারা বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সোহেল বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত কলা চাষ হয় যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কলা চাষের সুফল যাতে পাহাড়ের কৃষকরা পেতে পারে তাই আমরা সুপরামর্শ ও নিয়মিত কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। 

আরবি/জেডআর

Link copied!