রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রতিবেশী এক দম্পতির ঝগড়া থামাতে গিয়ে সোহান মিয়া (২৯) নামে এক যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহত যুবক উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের পাইকান গ্রামের মৃত. শাহাজাহান আলীর ছেলে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ৩ জনকে আটক করলেও ২ জন পলাতক থাকায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে পাইকান গ্রামের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোব করছেন গ্রামবাসীরা। অবরোধকারীরা দাবি করেন, সোহানের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় জনতার হাতে আটক ৩জন ঘাতকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেবেন বিক্ষুদ্ব গ্রামবাসী। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর দুটি টিম। তারা যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা হবে আশ্বস্ত করলে শান্ত হয় গ্রামবাসীরা। পরে নিহত যুবক সোহানের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য থানায় নেওয়ার পাশাপাশি জনতার হাতে আটক মূল ঘাতক সালাম ও ২ সহযোগীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ টিম।
প্রত্যক্ষদর্শী শাহ নেওয়াজসহ স্থানীয় অনেকেই জানান, প্রায় ৮ মাস আগে পাইকান গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলীর (২৭) সাথে একই উপজেলার জারুল্যাবাজ গ্রামের আব্দুস সালাম এর মেয়ে সাদিয়া আফরিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আলী-আফরিন দম্পত্তির মনোমালিন্যে চলছিল। তাদের পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে জামাই আলীর বাড়িতে কয়েকজন লোকসহ আসেন আলীর শশুর আব্দুস সালাম। তিনি মেয়ে জামাইয়ের সাথে পারিবারিক কলহের বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জামাই আলীকে মারপিট শুরু করেন। এসময় আলীর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান প্রতিবেশী সোহান। তিনি আলীকে বাঁচাতে গেলে আলীর শশুর আব্দুস সালাম (৬০) সোহানের অন্ডকোষ বরাবর লাথি মারেন। সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সোহান। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই আলীর মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘাতক সালামের সাথে আরও ২ জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার ৮ মাস আগে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়ের আগে আমি যে মেয়েকে দেখেছিলাম তাকে দিয়ে বিয়ে না দিয়ে অন্য একটি মেয়েকে দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। তারা যে আমার সাথে প্রতারণা করেছে সেটা নিয়েই বিয়ের পর থেকে ঝামেলা চলছিল। আজ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে আমার শশুর যে ঘটনা ঘটিয়েছেন সেটা মারাত্মক অন্যায়।
আলীর শশুর আব্দুস সালাম বলেন, মেয়ের পরিবারিক অশান্তির বিষয়ে জামাইয়ের বাড়ি আসছিলাম। জামাইকে থাপ্পড়ও মারছি। এরপর কি থেকে কি হয়ে গেল জানিনা।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোস্তফা কামাল বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। এঘটনায় গতকাল রাতেই মামলা হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। নিহত সোহানের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :