বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব "নবান্ন" উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। এক দিনের এই মাছের মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মনে উৎসব আর আনন্দের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। রবিবার (১৭ নভেম্বর) ভোরবেলা থেকেই কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে বসে এই মাছের মেলা। মেলায় মাছের দোকানগুলোতে চলে মাছ বেচাকেনার ধুম।
জানা গেছে, এই দিনের অপেক্ষায় প্রহর গনেন এই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজন। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে প্রায় বিশ বছর আগে থেকে প্রতি বছরের মত এবারও নবান্ন উপলক্ষে বসা মাছের মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলা,পুরুষ,শিশুরাসহ মাছ কিনতে আসে। বোয়াল, গ্রাসকার্প, রুই, সিলভার, কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেটসহ রকমারি প্রজাতির মাছ দিয়ে পসরা সাজায় ব্যবসায়ীরা। মাছের মেলাটিকে ঘিরে এ দিন নিকটবর্তী উপজেলাসহ ২০-২৫টি গ্রাম-মহল্লার মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। তাই এলাকার ধনী, গরীবসহ সব শ্রেণীপেশার মানুষ এ দিন সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী পছন্দের মাছ কিনে বাড়ি ফিরে। এবার মেলায় ওঠা বড় মাছগুলোর ওজন ছিল প্রায় ১০ থেকে ১৩ কজি। উৎসবমুখর পরিবেশে চলে মাছ বেচা-কেনা। এই অনুষ্ঠান উদযাপন করতে আসেন এ এলাকার জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ানসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
মেলায় মাছ কিনতে আসা পৌরসভার ডা. মনোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, সোহেল, শিক্ষক নাফসি তালুকদার, উপজেলার পুনট ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান,বৈরাগীর মোড়ের মুকুল হাসানসহ অনেকের সাথে কথা হয় তারা জানান, নবান উৎসবকে কেন্দ্র করে বসা এ মাছের মেলায় মাছের প্রচুর আমদানি সত্বেও দাম হাকা হয় অনেকটা বেশী।
মাছ ব্যবসায়ী রনি চদ্র মালি, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ, রাজু তালুকদার, বিমল, শহিদুল, সাদ্দাম, মোরশদ ও সাইদুলসহ অনেকে জানান, গতবারের তুলনায় এবার মাছ অনেক বেশি। মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচা-কেনা সে তুলনায় কম। তারপরও বেশি লাভেরই প্রত্যাশা করছেন তারা।
মাছ চাষ ব্যবসায়ী নুহ তালুকদার, নাহিদ চৌধুরী, রহুল আমিন তালুকদার, লবু সরকার, মাহমুদুল হাসানসহ অনেকে জানান, মাছের খাদ্যদ্রব্যের দাম যেভাব দ্রত বদ্ধি পাচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা বাজার মূল্য না পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ধীরে ধীরে এ ব্যবসা থেকে বিমুখ হতে পারে। তাই সরকারের কাছে মাছের খাদ্যদ্রব্যের দিকে নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ করুন।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রথম মাছের মেলার উদ্যোক্তা রহুল আমিন তালুকদার জানান, প্রায় বিশ বছর আগে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদী থেকে একটি বড় কাতল মাছ নিয়ে আসি মাছের মেলাকে কেদ্র করে। সেই থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই দিন পালন করা হয়। আগামীতে মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।
কালাই উপজলা মৎস্য কর্মকর্তা তহিদা মাহতামিম জানান, নবান্ন উৎসব উপলক্ষে ১লা অগ্রাহায়ন কালাই উপজেলার পাচশিরা বাজার মাছের মেলা আয়াজন করে থাকে। এট শুধু মাছ বিক্রি নয় আনদ উৎসব ও বটে যেখানে বেচা-কিনা ছাড়া ও অনেকে শুধু দখতে আসে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছসহ চিংড়ি বিক্রি করা হয়। কালাই মৎস্য দপ্তর থেকে মেলাটি সার্বক্ষনিক পরির্দশন করা হচ্ছে। যাতে করে মেলার নিদিষ্ট মাছ বিক্রি না হওয়া এবং মাছে ফরমালিন ব্যবহার না করতে পারে সেই সাথে চিংড়িতে পুশ আছ কিনা সে দিকে নজর দেয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :