কক্সবাজারের রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ মারমেইড বীচ রিসোর্ট কতৃপক্ষ গত ১৫/ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের বড় রতি মহারতির নাম ভাঙ্গিয়ে বসিয়েছে বড়বড় জলসাঘর।
ঝাউগাছ কেটে, সৈকত দখল করে বানিয়েছিল মারমেইডের `ফুল মুন পার্টি`র হেরামখানা। পরিবেশের ক্ষতি করেছে, ৫০ কোটি টাকার ৪ একর সরকারী জমি দখল করেছে, বনায়ন ধ্বংস করেছে। অবৈধ কাজ চালিয়েছে। অবশেষে প্রশাসনের ঘুম ভেঙ্গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মারমেইড বিচ রিসোর্ট কতৃপক্ষের দখলে থাকা অন্তত ৫০ কোটি টাকা দামের সরকারি খাস জমি, রেজুর খাল ও সৈকত দখল মুক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসময় হেরামখানা নামে খ্যাত ৩০টি স্থাপনা, সৈকত দ্বিখণ্ডিত করে নির্মিত কাঠের সেতু ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে মারমেই বীচ রিসোর্টের কর্মচারীরা গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও এবং অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। সাংবাদিকরা উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও সংগ্রহের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের নাজেহাল, অবরুদ্ধ করে রেখেছিল মারমেইড বীচ রিসোর্টের কর্মচারীরা। পরে পুলিশ ও এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্ধার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একপাশে ঝাউবনে ঘেরা সমুদ্র সৈকত এবং অন্যপাশে পাহাড় বেষ্টিত কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কেই পেঁচারদ্বীপ। এই স্থানটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পেঁচার দ্বীপের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে রেজু খালের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। এই মারমেইড বিচ রিসোর্ট কতৃপক্ষের গত ১৫/১৬ বছর যাবত সরকারী খাস জমি, সৈকত, রেজুখাল ও ঝাউবাগান সাবাড় করে বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। তাদের এই দখলদারির কাজে ক্ষুব্ধ ছিল স্থানীয়রা। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে রতিমহারতিদের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলসহ পরিবেশের ক্ষতি করে আসছিল।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভন জানান, গত ১৬/১৬ বছর ধরে প্রভাব খাটিয়ে দখল করা জমিতে গড়ে তোলা কাঠের সেতু, স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সৈকতে সহস্রাধিক বাউগাছ কেটে জমি দখল, বন ও পরিবেশের ক্ষতি করার ঘটনায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৪/৫ একর সরকারী খাস জমি দখল, সৈকত ঝাউবাগান নিধন ও সৈকত দ্বিখণ্ডিত করে নির্মিত কাঠের সেতু ও অর্ধশত স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। সহকারী কমিশনার ভুমি রামু এর নেতৃত্বে বনবিভাগ, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অভিযানে অংশ নেন।
অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবারের উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের উপরেও মারমেইড বীচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের লোকজন হেনস্তা করারও অভিযোগ উঠেছে।
সেখানে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া একাধিক গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, তারা ছবি তুলতে গেলে রিসোর্টের লোকজন বাঁধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হয়। তবে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দেন।
আপনার মতামত লিখুন :