চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্যবর্তী ধনাগোদা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁশের বেড়া ও জাগ ফেলে অবৈধভাবে মাছ ধরছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে করে ডিমওয়ালাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ নিধন হচ্ছে। এছাড়া বাঁধের কারণে নৌ-যান চলাচল ও পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবৈধ জাগের ফলে মতলব উত্তর উপজেলার কালীরবাজার থেকে শ্রী রায়ের চর (বাংলাবাজার) পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় কচুরিপানার জমাট বেঁধে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ধনাগোদা নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দু’উপজেলার মধ্যবর্তী ধনাগোদা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটারের মধ্যে দু’পাশে ও মাঝে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে জাগ দেওয়া হয়েছে। বাঁশের বেড়ার সাথে মশারীর জাল চারদিকে আটকানো। পানির উপরিভাগ থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত এ জাল ছড়িয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ ধরছে। তারমধ্যে পুঁটি, টেংরা, বেলে, রুই, কাতলা, আইড়মাছ সহ দেশী জাতের ডিমওয়ালা মাছ ধরছেন জেলেরা।
মতলব উত্তর উপজেলার কালীপুর বাজার সংলগ্ন মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে সাদুল্ল্যাপুর ইউনিয়নের আব্দুল হালিম মেম্বার, রতন মিয়া, পার্শ্ববর্তী গজারিয়া উপজেলার আ. ছামাদ মিঝিসহ ২৫ থেকে ৩০ জন স্থানীয় নিজ নিজ এলাকায় নদীতে বাঁশ বসিয়ে মাছ ধরছেন। ঐ এলাকার ২-৩ জন জেলে বলেন তারা শুধু জালের মাালিক। বেড়ার মালিক সামাদ মিঝি এবং হালিম মেম্বার।
এ বিষয়ে আ. সামাদ মিঝি ও হালিম মেম্বার জানান, আমরা প্রতি বছর এ নদীতে জাগ ফেলে মাছ ধরি। প্রশাসন আমাদেরকে নিষেধ করেনি। যদি নদীতে জাগ ফেলা অবৈধ হয় তাহলে আর এ কাজ করবনা।
মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে মতে জানা যায়, ২-৩ বছর ধরে ধনাগোদা নদীর ২০ কিলোমিটার দূরে মতলব উত্তর উপজেলার কালীপুর বাজার, কালির বাজার, দূর্গাপুর, বাংলাবাজার, আমুয়াকান্দা, লক্ষীপুর, নন্দলালপুর, ঠেটালিয়া, আমিরাবাদ, বিনন্দপুর, গাজীপুর, এনায়েতনগর সহ প্রায় ৩০টি এলাকায় বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে এবং দক্ষিণ উপজেলার চরমুকুন্দী, কাজির বাজার, উদ্দমদী, সাহাপুর, চরলক্ষীপুর, মাছুয়াখাল, উত্তর বাইশপুর, নায়েরগাঁও, বাইশপুর প্রতিটি এলাকায় গড়ে ২৫ থেকে ৩০টির বেশি বেড়া পাতা হয়েছে। এর মধ্যে কালীপুর এলাকায় ৪৫টি, সিপাইকান্দি ৩০টি, আমিরাবাদে ৫০টি, নন্দলালপুরে ২৫টি, কালীর বাজার এলাকায় ৩০টি, মতলব ব্রিজ এলাকায় ১০টি, নায়েরগাঁও ৪৫টি, কাজির বাজারে ৩০টি, পশ্চিম বাইশপুরে ৩০টি, চরমুকুন্দী ২০টি, পশ্চিম বাইশপুরে ৩০টি সহ ৬ শতাধিক বেড়া পাতা হয়েছে।
সূত্রমতে আরো জানা যায়, প্রতিটি বেড়ায় ২ মেট্টিকটন করে ৯শতাধিক বেড়ায় প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্টিক টনের বেশি মাছ নিধন ধরা হয়ে থাকে। এসব মাছের বাজার জাত মূল্য প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম নবী খোকন জানান, এভাবে মাছ নিধন করলে দেশি প্রজাতির মাছ শেষ হয়ে যাবে। এসব বন্ধ করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
এ ব্যাপারে মতলব মতলব উত্তর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, ১৯৫০ সালের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন মোতাবেক নদীতে বেড়া বা বাঁধ দিয়ে যেকোন মাছ শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ। তার ধারাবাহিকতায় আমার গত জুলাই-আগষ্টে আমরা নদীতে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিছুদিন হলো মাই ইলিশ রক্ষার অভিযান শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের ভিতরে আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :